পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

একটি পরামর্শ তৈরি করো যে কোনো কাজে লাগবে না। কেননা আমরা ছেলেবেলা থেকে আমাদের গুরুলোকদের অভ্রান্ত বুদ্ধির উপর নির্ভর করছি, আমরা যেখেনেই আমাদের নিজের মত খাটাতে গিয়েছি সেইখেনেই তাঁরা ছেলেমানুষ বলে আমাদের চুপ করিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কখনো যুক্তি দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করেন নি। ছেলেমানুষের কাছে যুক্তি প্রয়োগ করা তাঁরা বৃথা পরিশ্রম মনে করেন। আমাদের শাস্ত্রকারেরাও এক কালে তাই মনে করতেন; তাঁরা শ্রম সংক্ষেপ করবার জন্যে সত্যকথাগুলিও মিথ্যার আকারে প্রচার করেছেন ও যুক্তির বদলে বিভীষিকা দেখিয়ে লোকের মনে বিশ্বাস জন্মিয়ে দিয়েছেন। যদি বলো গুরুলোকেরা আমাদের চেয়ে জ্ঞানী, সুতরাং তাঁদের হাতে আপনাকে সম্পূর্ণরূপে গচ্ছিত রাখা আমাদের পক্ষে ভালো— তা যদি বলো তা হলে ইংরাজদের কাছ থেকে কতকগুলি স্বাধীনতা পাবার জন্যে আমরা খবরের কাগজে দাপাদাপি করে মরি কেন? ইংরাজরা যে আমাদের চেয়ে জ্ঞানে ও গুণে শ্রেষ্ঠ সে বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। সম্পর্কে-বড়ো কিম্বা বয়সে-বড়োর চেয়ে গুণে-বড়োর কাছে আত্মবিসর্জন করা ঢের বেশি যুক্তিসিদ্ধ।[১] তবে কেন তাঁদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে আমরা নিজের হাতে কতকগুলি স্বাধীনতা নিতে চাই? তুমি বলবে, যাঁদের আমাদের উপরে স্বাভাবিক অধিকার আছে, তাঁদের কাছে আমরা সর্বতোভাবে আজ্ঞাবহ হয়ে থাকব। তা থাকো-না কেন। কিন্তু ফলে যে সমানই কথা। তোমার চড় মারবার অধিকার আছে বলে যে ব্যক্তি চড় খাবে তার যে কিছু কম লাগবে তা তো নয়। যেখানেই অন্ধ একাধিপত্য সেইখানেই খারাপ। যখন গুরুলোকেরা আপনার ইচ্ছা ও সংস্কার এমন-কি কুসংস্কারের বিরোধী হল ব’লে ছোটোর

১৫১
  1.