পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

প্রত্যেক ইচ্ছা অবিচারে দলন না করবেন, তখন অনেক উপকার হবে।[১] আমাদের দেশের অশুভের মূল ঐখান থেকে অনেকটা পােষণ পাচ্ছে। এখানকার তুলনায় আমি সেইটি ভালাে করে বুঝতে পেরেছি। সু-বি—দের দেখাে, তাদের উদ্যম উৎসাহ, অধীর বাল্যভাব ও স্বাধীনতাস্পৃহার সঙ্গে আমাদের দেশের ছেলেদের শুষ্ক মলিন গম্ভীর ধীর ভাব[২] ও সম্পূর্ণরূপে পরনির্ভরতার তুলনা করে দেখাে― সে কী অনৈক্য! আমি ইংরেজের ছেলেদের সঙ্গে তুলনা করলুম না, পাছে তুমি বল তাদের জাতিগত স্বভাবের সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বভাবের ভিন্নতা আছে। কিন্তু আমাদের দেশীয় ছেলেই যথােপযুক্ত স্বাধীনতার সঙ্গে পালিত হলে তার কিরকম স্ফূর্তি হয়, তার মনের স্বাস্থ্য কিরকম অক্ষুন্ন থাকে তাই দেখাে। ছেলেদের স্বাভাবিক ভাব হচ্ছে প্রশ্ন করা, একটা জানবার ইচ্ছে। এখানকার ছেলেরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ক’রে ক’রে সারা হয়। সু― আমাকে প্রশ্ন করে করে অস্থির করে তােলে; আকাশের তারা থেকে পৃথিবীর তৃণ পর্যন্ত এমন কোনাে পদার্থ নেই, বৈজ্ঞানিক খুটিনাটি করে সে যার ঘরের খবর না জানতে চায়। আমি যখন টর্কিতে ছিলুম তখন একটি ছেলে আমার সঙ্গে খুব ভাব করে নিয়েছিল; পৃথিবীর যা-কিছু দেখত তাই যেন তার ভারী আশ্চর্য লাগত, প্রতি পদে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করে আমাকে ভারী মুশকিলে ফেলত― তার কৌতূহলের আর আদি অন্ত নেই। তা ছাড়া এখানকার ছেলেদের এক রকম স্বাধীন ও পৌরুষের ভাব দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। তার প্রধান কারণ, এখানকার গুরুলোকেরা তাদের প্রতি পদে বাধা দেয় না, আর অনেকটা সমান সমান ভাবে রাখে। আমি এখানকার একটা প্রাইবেট স্কুল দেখেছিলেম—মাস্টার ছেলেদের সঙ্গে ঠাট্টাঠুট্টি করেন,

১৫২
  1.  
  2.