পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

মধ্যে দাসত্বের ভাব যে কত কম তা হয়তাে তুমি না দেখলে ভালাে করে বুঝতে পারবে না। আমি একটি পরিবার জানি, সেখানে মনিবরা রান্না ঘরে যেতে হলে রাঁধুনির অনুমতি চেয়ে পাঠাতেন, পাছে তার কাজের মধ্যে intrude করলে সে বিরক্ত হয়ে ওঠে! এই থেকে কতকটা বুঝতে পারবে। এই রকম এখানকার পরিবারে স্বাধীনতা মূর্তিমান, কেউ কাউকে প্রভুভাবে আজ্ঞা করে না ও কাউকে অন্ধ আজ্ঞা পালন করতে হয় না। এমন না হলে একটা জাতির মধ্যে এত স্বাধীনভাব কোথা থেকে আসবে? কিম্বা হয়তো আমি উলটো বলছি, একটা জাতির হৃদয়ে স্বভাবতঃ এতটা স্বাধীনভাব না থাকলে এমন কী করে হবে? যাদের হৃদয়ে স্বাধীনভাব নেই তারা যেমন অম্লানবদনে নিজের গলায় দাসত্বের রজ্জু বাঁধতে পারে, একটু অবসর পেলেই পরের গলায়ও তেমনি অকাতরে দাসত্বের রজ্জু বাঁধতে ভালােবাসে। আমাদের সমাজের আপাদমস্তক দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ। আমরা পারিবারিক দাসত্বকে দাসত্ব নাম দিই নে; কিন্তু নামের গিলটি করে আমরা বড়ােজোর দাসত্বের লােহার শৃঙ্খলকে সােনার আকার ধরাতে পারি, কিন্তু তার শৃঙ্খলত্ব ঘােচাতে পারি নে, তার যা কুফল তা থেকে যায়। আমি আগে মনে করতুম যে হিন্দুদের মনে একটা সহজ স্বাভাবিক ভাব আছে, কোনাে প্রকার অস্বাভাবিক বাঁধাবাঁধি আইন-কানুন নেই। কিন্তু কোন্ লজ্জায় আর তা বলব বলো। হিন্দুদের মধ্যে অস্বাভাবিক আইন-কানুন নেই? তাদের পরিবারের মধ্যে দেখাে! আপনার ভাই-বােন পিতা-মাতা স্ত্রী-পুত্রের মধ্যে কতটা বাঁধাবাঁধি আছে একবার দেখাে। ভাইয়ের প্রতি কিরকম ব্যবহার করতে হবে তা কোন্ দেশে শেখাতে হয় বলো দেখি। তবে যদি বলো যে, ভাইয়ের প্রতি পিতা বা পুত্রের মতাে ব্যবহার করতে হবে, তা হলে শেখাবার

১৫৪