পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

সমাজের অনেক রকম বড়ো বড়ো সংস্কারের কথা পাড়েন, আমি একটা ছোটোখাটো পরামর্শ দিচ্ছি শোনো দেখি—আমাদের পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যজনক স্বাধীনতা সঞ্চার করে দেও দেখি, টানাটানি বাঁধাবাঁধি শাসন ও পরনির্ভরতা কমিয়ে দেও দেখি। তুমি হয়তো ভারী চটে উঠেছ; তুমি বলছ যে, ‘তুমি বিলেতে কী দেখেছ শুনেছ তাই বলো, আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি; কিন্তু এ রকম যদি বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করো তা হলে তো আর আমাদের ধৈর্য থাকে না।’ কিন্তু তোমাকে এইখেনে বলে রাখছি, আমি এ চিঠিতে টেম্‌স‍্টানেল ও ওয়েস্ট‍্ মিনিস্টর হলের বর্ণনা করতে বসি নি। বিলেতের সমাজ আদি দেখে আমার কী মনে হল ও আমার কিরকমে মত পরিবর্তন ও গঠিত হল তাই বলব। আজ আমার যে মত তোমাদের বিস্তৃত করে লিখলুম তা এখানকার সমাজ দেখে আস্তে আস্তে আমার মনে বদ্ধমূল হয়েছে। একটা সমাজের ভিতরে না থেকে, বাইরে থেকে তা আলোচনা করলে তার অনেক বিষয় যথার্থরূপে চোখে পড়ে; ভিতরে থাকলে খুব কম বিষয় আমাদের চোখে পড়ে, সকলই স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আমার তাই একটি মহা সুবিধে, আর-একটি সমাজের সঙ্গে তুলনা করতে পারছি। তোমার নিজের মতের সঙ্গে মিলল না ব’লে তুমি হয়তো বলবে ‘বিলেতে গিয়ে লোকটার মাতা ঘুরে গিয়েছে’। এ কথা বললে কোনো যুক্তি না দেখিয়ে আমার সমস্ত কথাগুলো এক তোপে উড়িয়ে দিতে পারো। কিন্তু আমি তোমাদের বিশেষ করে বলছি, বিলেতে এসে কারু যদি মাথা না ঘুরে থাকে তো সে তোমাদের এই বিনীত দাসের।

১৫৭