পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

জোর করে বিছানা থেকে উঠিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলেন। যখন উঠে দাঁড়ালেম তখন আমার মাথাটার ভিতর যেন একটা বিপর্যয় ব্যাপার বেধে গেল; মাথার ভিতর যা-কিছু আছে সবাই মিলে যেন মারামারি কাটাকাটি আরম্ভ করে দিলে; চোখে দেখতে পাই নে, পা চলে না, সর্বাঙ্গ টলমল করে। দু পা গিয়েই একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লেম। আমার সহযাত্রীটি আমাকে ধরাধরি করে জাহাজের ‘ডেকে’ অর্থাৎ ছাতে নিয়ে গেলেন। একটা রেলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেম। তখন অন্ধকার রাত। আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন। আমাদের প্রতিকূলে বাতাস বইছে। সেই অন্ধকারের মধ্যে সেই নিরাশ্রয় অকূল সমুদ্রে দুই দিকে অগ্নি উৎক্ষিপ্ত করতে করতে আমাদের জাহাজ একলা চলেছে, যেখানে চাই সেই দিকেই অন্ধকার, সমুদ্র ফুলে ফুলে উঠছে―সে এক মহা গম্ভীর দৃশ্য। জাহাজ যখন চলে তখন তার দুই দিকে যেন আগুন ভেঙে পড়ে, অন্ধকার রাত্রে সে বড়ো সুন্দর দেখায়। একেই phosphorescence বলে।

 সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারলেম না। ভয়ানক মাথা ঘুরতে লাগল। ধরাধরি করে আবার আমার ক্যাবিনে (ঘরে) এলেম। সেই-যে বিছানায় পড়লেম, ছ দিন আর এক মুহূর্তের জন্যও মাথা তুলি নি। আমাদের যে স্টুয়ার্ড্‌ ছিল (যাত্রীদের সেবার জন্য জাহাজে যেসব চাকর থাকে)―কারণ জানি নে―আমার উপর তার কেমন বিশেষ কৃপাদৃষ্টি ছিল। দিনের মধ্যে যখন-তখন সে আমার জন্যে খাবার নিয়ে উপস্থিত করত; না খেলে কোনো মতেই ছাড়ত না। সে বলত, না খেলে আমি ইঁদুরের মতো দুর্বল হয়ে পড়ব (weak as a rat)। সে বলত সে আমার জন্যে সব কাজ করতে পারে। আমি তাকে যথেষ্ট সাধুবাদ দিতেম, এবং জাহাজ