পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র





১৬৪

    বিশেষে তাহা অপেক্ষা অধিক ভালোবাসে কি না? ধাত্রী পর হইয়াও যদি মাতার ন্যায় হইতে পারে তবে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আপনার হইয়া কেননা পিতৃতুল্য হইতে পারিবে? বড়োর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা করিবে না তো কাহার প্রতি করিবে? ভা.স.

    চব্বিশ ঘণ্টা গুরুলোকের সঙ্গে থাকলে ছেলেরা দু দিনে বুড়িয়ে যায়— কোনো ছেলেকে আজ পর্যন্ত ওরূপ করিতে দেখি নাই। ভা.স.

    গুরুলোকেরা শিক্ষার স্থান, ভক্তিশ্রদ্ধার স্থান— বিশ্রামের স্থান বা বিনোদের স্থান নহেন। তাঁহারা যদি বিনোদের স্থান হইবেন তবে সমবয়স্কেরা কী করিতে রহিয়াছে? ক্ষুধার জন্য অন্ন রহিয়াছে, তৃষ্ণার জন্য জল রহিয়াছে, ইহা বিস্মৃত হইয়া ক্ষুধা পাইলে যে ব্যক্তি জল খায় ও তৃষ্ণা পাইলে ভাত খায়, সেই ব্যক্তিরই কর্ম— বিনোদ-ইচ্ছা হইলে গুরুলোকের নিকট যাওয়া ও সদুপদেশ এবং উচ্চ সহবাসের ইচ্ছা হইলে সমবয়দিগের নিকট যাওয়া। ভক্তিভাজন ব্যক্তির সম্মুখে মন স্বভাবতই প্রশান্ত সংরত ভাব ধারণ করে—মনঃসংঘম যাহা অনেক শিক্ষার ফল তাহা আপনা-আপনি হয়, এ কিছু কম কথা নহে। ভা.স.

    কেন মুখ খুলিবার জো নাই? অবশ্য মুখ খুলিবার জো আছে— কেবল এলোমেলো যা ইচ্ছা তাই বকিবার জো নাই। গুরুজনদিগের কথাবার্তা রীতি-চরিত্র দেখিয়া শুনিয়া বালকেরা কথাবার্তা কহিতে, বসিতে, দাঁড়াইতে যত দিন না শেখে ততদিন তাহারা অসম্বদ্ধ প্রলাপ করিলে আদর বৈ ভর্ৎসনা লাভ করে না এবং বালকদের বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের চাপল্য হ্রাস পায় ও গুরুজনদিগের প্রতি ভক্তিভাবের উদয় হয়—ইহা সকল দেশেই সমান। ভা.স.

    এইরূপ স্বাধীন উচ্ছ্বাসের ভাব দেখিবার জন্য বিলাতে যাইবার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই, একজন সামান্য খৃস্টান বাঙালির ঘরেও ঐরূপ স্বাধীন উচ্ছ্বাসের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেরূপ উচ্ছ্বাস বাস্তবিক স্বাধীন উচ্ছ্বাস কিম্বা প্রবৃত্তির অন্ধ উত্তেজনা, এইটির প্রতি একটু মনোযোগ করিলে ভালো হয়। দেশকালপাত্রোচিত কর্তব্যাকর্তব্য বিবেচনা করিয়া যে কার্য করা হয় তাহাই স্বাধীন নামের যোগ্য; স্বাধীন, কি-না স্ববশ। কিন্তু