পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র:পাদটীকা


১৬৫

    স্ববশ দূরে থাকুক, আমি যখন এরূপ অবশ হইয়া পড়িয়াছি যে গুরুজনের প্রতি একটুও দৃক‍্পাত নাই, আপনার সুখেই আপনি অচেতন, তখনকার সে মূঢ় ভাবকে স্বাধীনতা বলা আর পা’কে মাথা বলা উভয়ই সমান। স্ত্রীর সহিত যেরূপ মন-খোলাখুলি করিয়া কথাবার্তা কহা যায় তাহা কি গুরুজনের শ্রুতিযোগ্য না গুরুজনেরা তাহা শুনেন ইহা কাহারও প্রার্থনীয়? স্ত্রী পুরুষদের নির্জনে কথাবাতা কহিবার রীতি সকল দেশেই প্রচলিত আছে, কেবল আমাদের দেশে নহে। ইহার কারণ এই যে, পতিপত্নীর মধ্যে এরূপ অভেদ সম্বন্ধ যে উভয়ের মধ্যে গোপনীয় কিছুই নাই, সুতরাং পতিপত্নী নির্জনে যেরূপ কথাবার্তা কহে গুরুজন-সমক্ষে তাহারা সেরূপ কথাবার্তা কহিলে তাহাদের পতি-পত্নীত্ব ভূত-পেত্নীত্বে পরিণত হয়। পতি-পত্নী যখন গুরুজনসমক্ষে সর্বান্তঃকরণে আলাপ করিতে পারে না তখন সে জায়গায় আলাপ না করাই তো ভালো, যে জায়গায় আমি মন খুলিয়া হাসিতে না পারি সেখানে না হাসাই তো ভালো—এই-সকল সোজা বিষয়কে নানা রূপে বাঁকাইয়া তাহা কোনো জন্মে যা নয় তাই করিয়া তোলা বক্তৃতাশক্তির অপব্যবহার ভিন্ন আর-কিছুই নহে। ভা. স.

    একটা গল্প মনে পড়িল— একজন সহস্রমারী দলের কবিরাজ রোগীকে দেখিতে আসিয়া তাহার ঘরের লোকদের জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আর কোনো চিকিৎসককে কি দেখানো হইয়াছিল?’ তাঁহারা বলিলেন, ‘অমুক চিকিত্সককে দেখানো হইয়াছিল।’ কবিরাজ বলিলেন, ‘তিনি কী বলিয়াছেন?’ তাঁহারা বলিলেন তিনি বলিয়াছেন যে, ‘নাড়ীতে এখনো একটু বেগ আছে, আজকের দিন স্নানটা স্থগিত রাখিলে ভালো হয়।’ কবিরাজ ক্রোধান্বিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, ‘আরে, আমি কি বলছি ওকে অষ্টগ্রহর জলে চুবিয়ে মেরে ফেল্! আর কী বললেন?’ উত্তর- ‘আর বলেছেন আজকের দিন ভাত না দিয়ে খই বাতাসা এমনি-সকল সামগ্রী খেতে দেওয়া হয়।’ কবিরাজ বলিলেন, ‘আরে, আমি কি বলছি ওকে গাণ্ডে-পিণ্ডে যা-তা খাইয়ে ওকে একেবারে শেষ করে ফেল্‌!’ ইত্যাদি। বিলাতি শাস্ত্র বলছেন— লোকজন মিলে মিশে আমোদ করা ভালো; আরে, আমাদের শাস্ত্র কি বলছে যে,