পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

ছেড়ে আসবার সময় সাধুবাদের চেয়ে আরও কিঞ্চিৎ সারবান পদার্থ দিয়েছিলেন।

 ছ দিনের পর আমরা যখন এডেনের কাছাকাছি পৌঁছলেম, তখন সমুদ্র কিছু শান্ত হল। সে দিন আমার স্টুয়ার্ড্‌ এসে ন’ড়ে চ’ড়ে বেড়াবার জন্যে আমাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগল। আমি তার পরামর্শ শুনে বিছানা থেকে তো উঠলেম, উঠে দেখি যে সত্যিই ইঁদুরের মতো দুর্বল হয়ে পড়েছি। মাথাটা যেন ধারকরা, কাঁধের সঙ্গে তার ভালোরকম বনে না; চুরি-করা কাপড়ের মতো শরীরটা যেন আমার ঠিক গায়ে লাগছে না। ঘর থেকে বেরিয়ে ছাতের উপর গিয়ে একটা কেদারায় হেলান দিয়ে পড়লেম। অনেক দিনের পর বাতাস পেয়ে বাঁচলেম। দুপুর বেলা দেখি একটা ছোটো নৌকা সেই সমুদ্র দিয়ে চলেছে। চার দিকে অনেক দূর পর্যন্ত আর ডাঙা নেই, জাহাজ-সুদ্ধ নোক অবাক। তারা আমাদের স্টীমারকে ডাকতে আরম্ভ করলে; জাহাজ থামল। তারা একটি অতি ছোটো নৌকায় করে কতকগুলি লোক জাহাজে পাঠিয়ে দিলে। এরা সকলে আরব-দেশীয়, এডেন থেকে মস্কটে যাচ্ছে। পথের মধ্যে দিক্‌ভ্রম হয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে যা জলের পিপে ছিল তা ভেঙে গিয়ে জল সমস্ত নষ্ট হয়ে গেছে, অথচ যাত্রী অনেক। আমাদের জাহাজের লোকেরা তাদের জল দিলে। একটি ম্যাপ খুলে কোন্ দিকে ও কত দূরে মস্কট তাদের দেখিয়ে দিলে, তারা আবার চলতে লাগল। সে নৌকো যে মস্কট পর্যন্ত পৌঁছবে, তাতে সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করতে লাগল।

 ২৮শে সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, আমাদের সম্মুখে সব পাহাড় পর্বত উঠেছে। অতি সুন্দর পরিষ্কার প্রভাত; সূর্য সবে মাত্র উঠেছে, সমুদ্র অতিশয় শান্ত। দূর