পাঠক-মহাশয়ের অযথা দেশানুরাগে হয়তো আঘাত লাগতে পারে) যে, সম্পাদক-মহাশয় ইংরাজ মহিলাদের প্রতি যতগুলি দোষারোপ করেছেন তার কোনোটা সত্য নয়। কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিশেষ অভিধানে যদি বিনয় অর্থে যথাসাধ্য কথার উত্তর না দিয়ে, ঘোমটা টেনে, সংকোচে নিতান্ত ম্রিয়মাণ হয়ে বসে থাকা না হয় তা হলে ইংরেজ ভদ্রমহিলারা বিনয়ের আদর্শ। ইংরাজ পরিবারের মধ্যে এমন কত শত বালিকা (আমাদের দেশের পূর্ণযৌবনা) দেখা যায় যারা সরলতার প্রতিমা, যারা তুষারের মতো, নিজের শুভ্র ললাটের মতো নিষ্কলঙ্ক; নিষ্কলঙ্ক অর্থে শুদ্ধ কার্যতঃ নিষ্কলঙ্ক নয়, তাদের মন বিশুদ্ধ; ছেলেবেলা থেকে তাদের স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস স্ফূর্তি পেয়েছে, দাসীদের কাছ থেকে বা অসৎমনা সমবয়স্কা প্রতিবেশিনীদের কাছ থেকে বিয়ের কথা, বরের কথা, সংসারধর্মের কথা বা কোনো রকম অসৎ কথা একটিমাত্র শোনে নি— সর্বদা হাস্যোচ্ছ্বাসময়ী। উচ্চের প্রতি ভক্তিমত্তা যদি বল তবে তা ইংলন্ডে যেমন আছে এমন অন্যত্র সচরাচর পাওয়া যায় কি না সন্দেহ। যেখেনে Carlyleকে গাড়ি চড়ে যেতে দেখলে কত শত রাস্তার লোক টুপি খুলে গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটেছিল— যেখানে কোথায় Shakespeare একটা গাছ পুঁতেছিলেন, কোথায় Addisonএর একটা চৌকি আছে, সে-সমস্ত লোকে একেবারে তীর্থস্থান করে তুলেছে— যেখেনে একজন কবির পাণ্ডুলিপি, একজন খ্যাত ব্যক্তির নিজের হাতের নামসই পেলে লোকে আপনাকে কৃতকৃতার্থ মনে করে— সেখেনে উচ্চের প্রতি ভক্তিমত্তা নেই কী করে বলব? আর সেই উচ্চের প্রতি ভক্তিমত্তা হতে সেখানকার স্ত্রীলোকেরাই যে বিশেষ বঞ্চিত এমন নয়। এ কথার উত্তর তেমন আর কিছু হতে পারে না যেমন, একটিবার বিলেতে যাওয়া।
পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পত্র
১৭১