পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পত্র

বোম্বাইয়ে আছে, কিন্তু সে-সকল নিয়ে আন্দোলন করা লেখকের উদ্দেশ্য নহে। সর্বদেশসম্মত স্ত্রীস্বাধীনতার বিশুদ্ধ আদর্শ নিয়ে আলোচনা করাও লেখকের উদ্দেশ্য নহে। ইংলন‍্ডে যেরূপ স্ত্রীস্বাধীনতা প্রচলিত তাই যা কেবল লেখকের একমাত্র আলোচ্য বিষয়, এরূপ যখন— তখন ইংলন্‌ডের প্রচলিত স্ত্রীস্বাধীনতা যে কী ভয়ানক বস্তু, তাহা যে শত সহস্র স্থানে নামে স্বাধীনতা কাজে স্বৈরচারিতালেখক সে-সকল কথার উল্লেখ না করাতে প্রকারান্তরে বলা হইয়াছে যে বিবিদের অনুকরণ করিলেই আমাদের কুলরমণীরা স্বাধীনতাপথে বিচরণ করিতে পারিবেন।’ ইংলন্‌ডের ধান ভানতে গিয়ে আমি জাপানের বা বোম্বায়ের শিবের গান তুলব, সম্পাদক-মহাশয় যদি কখনো এ রকম আশা করে থাকেন তা হলে বলা বাহুল্য আমার মতো প্রকৃতিস্থ লোকের কাছে সে আশা করা দুরাশা। আমি চোখে চশমা এঁটে, চাপকান প’রে, জগতের অজ্ঞানতিমিরমোচন নিতান্ত মহামূল্য মতগুলি অনুগ্রহপূর্বক পাঠকদের বিতরণ করছিলুম না; আমি বৈঠকখানায় বসে পাঠক-মহাশয়ের সঙ্গে দু দণ্ড গল্পসল্প করছিলুম। একটা গল্প থেকে আর একটা গল্প ওঠে। একটা নিমন্ত্রণসভা বর্ণনা করে সেই সূত্রে স্ত্রীস্বাধীনতার কথা আমার মনে এল, সে বিষয়ে আমার যা-কিছু বক্তব্য ছিল সব বলে ফেললুম। আমার সে বক্তব্যের মধ্যে ইংলন‍্ডের স্ত্রীস্বাধীনতার উল্লেখমাত্র ছিল না, আর, সত্যের খাতিরে সম্পাদক-মহাশয়ের কাছে নিতান্ত লজ্জার সহিত স্বীকার করতে হচ্ছে, জাপানের ও বোম্বায়ের স্ত্রীস্বাধীনতা আমার মনেও আসে নি। মনে আসে নি— অপরাধ হয়েছে বটে! তা, সম্পাদকীয় বেত্রাঘাতে মনে না আসবার জন্যে যথেষ্ট শাস্তিও পেয়েছি। আচ্ছা, নাহয় এবার থেকে আমি যখনি স্ত্রীস্বাধীনতার কথা ভাবব তখনি জাপান ও বোম্বায়ের

১৭৩