পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

এমন কী কাজ করা যেতে পারে যা কু লোকে কু না ভাবতে পারে, এমন-কি সু লোকের কু ভাবতে আটক থাকে? বলো-না কেন, আহার করা অবৈধ—দুধেতে প্রুসিক আসিড মেশানো থাকতে পারে, মাছের ঝোলে খানিকটা আফিম গোলা থাকতে পারে, আর ভাতের মধ্যে খানিকটা হোর্ভেল থাকাও নিতান্ত অসম্ভব নয়। যদি সম্পাদক-মহাশয় বলতেন পরপুরুষের সঙ্গে এমন করে মেশা কর্তব্য নয় যাতে করে সাধারণতঃ প্রকৃতিস্থ লোকে স্বভাবতই কু ভাবতে পারে, সে এক স্বতন্ত্র কথা হত; কিন্তু পাছে লোকে কু ভাবে সেইজন্যে একেবারে পরপুরুষের সঙ্গে মেশাই কর্তব্য নহে এ যে বড়ো ভয়ানক কথা! যদি বলো এমন স্থলে সাবধানে আহার করা উচিত যেখানে খাদ্যে বিষ থাকবার যথার্থ সম্ভাবনা আছে, তা হলে কথাটা মানি; কিন্তু খাদ্যে বিষ থাকা অসম্ভব নয় ব’লে আহার বন্ধ করতে পরামর্শ দিলে— আর যে-কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই তা পালন করুন-না কেন, আমি করি নে।[১] পাছে ‘স্বামীর মনে কু-আশঙ্কা স্থান পায়’ এ সম্বন্ধেও পূর্বোক্ত কথাটা খাটে, অর্থাৎ পরপুরুষের সহিত যদি এমন করে মেশা যায় যাতে করে স্বামীর মনে কু-আশঙ্কা স্থান পাবার সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার থেকে হানি হতে পারে, নতুবা নয়। সম্পাদক-মহাশয় বলেন ‘স্বামীর হয়তো এইরূপ একটা মাত্রা নির্ধারিত আছে যে, পরপুরুষের সহিত স্ত্রীলোকের এইটুকু মেলামেশাই ভালো, তাহা অপেক্ষা বেশি ঘনিষ্ঠতা ভালো না। যে স্ত্রী স্বামীকে ভালোবাসে সেই স্ত্রী সেই মাত্রাটি অতিক্রম করিয়া স্বামীর মনে আঘাত দিতে কুণ্ঠিত হইবে না তো কে হইবে?’ সত্যই তো। সচরাচর তো এমন হয়েই থাকে। jealous স্বামীরা পাছে মনে আঘাত পায় এইজন্যে তো য়ুরোপে অনেক হতভাগ্য রমণী ইচ্ছা করেই হোক বা শাসনভয়েই হোক

১৭৬
  1.