পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পত্র

কসাইয়ের দোকানগুলো দেখলে আমার গা শিউরে ওঠে, এখানকার সূক্ষ্মস্নায়ুবিশিষ্ট বিবিরা এ দৃশ্য কী করে সহ্য করেন বলতে পারি নে। অনেক বিবি ইচ্ছে করে বাজার করতে আসেন। ফলের দোকানে বা তরকারীর দোকানে শখ করে বাজার করতে পারা যায়; কিন্তু কসাইয়ের দোকানের মতো অমন নিষ্ঠুর জায়গায় ভদ্রলোকদের কোমলহৃদয়া মেয়েরা কী করে সাধ করে আসেন আমি তাই ভাবি— সকলই অভ্যেস। একজন বিবি বলেন যে, কসাইয়ের দোকান দেখলে তাঁর বেশ তৃপ্তি হয়; তাঁর মনে হয় যে, দেশে আহারের অপ্রতুল নেই, দেশের পেট ভরবার মতো খাবার প্রচুর আছে, দুর্ভিক্ষের কোনো সম্ভাবনা নেই। ইংরেজদের খাবার টেবিলে যে রকম আকারে মাংস এনে দেওয়া হয় তাতেও কেমন অহৃদয়তা প্রকাশ পায়। কেটে কুটে মসলা দিয়ে মাংস তৈরি করে এনে দিলে এক রকম ভুলে যাওয়া যায় যে, একটা সত্যিকার জন্তু খেতে বসেছি; কিন্তু মুখ-পা-বিশিষ্ট একটা আস্ত প্রাণীকে অবিকৃত আকারে টেবিলে এনে দিলে একটা জীবন্ত প্রাণীর মৃতদেহ খেতে বসেছি বলে গা কেমন করতে থাকে। কশাইয়ের দোকানের ওপর অনেক কথা বললুম, কেননা বিলেতে এসে অবধি আমার ঐটের ওপর অত্যন্ত ঘৃণা আছে— সেই ঝাল ঝাড়তে গিয়ে কথাটা অত্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ল। নাপিতের দোকানের জানলায় নানা প্রকার কাঠের মাথায় নানা প্রকার কোঁকড়ানো পরচুলো বসানো রয়েছে, দাড়ি গোঁফ ঝুলছে, শত শত মার্কা-মারা শিশিতে টাক-নাশক চুল-উঠে-যাওয়া নিবারক শত প্রকার অব্যর্থ ওষুধ রয়েছে, দীর্ঘকেশী মহিলারা এই দোকানে গেলে সেবকেরা (সেবিকা নয়) তাঁদের মাথা ধুয়ে দেবে, চুল বেঁধে দেবে, চুল কুঁকড়ে দেবে— এবং এই রকম নানা প্রকার

১৮৫