পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পত্র

ঘাসের মধ্যে সাদা সাদা ডেজি ও হলদে বাটার-কপ এক রাশ ফুটে রয়েছে— চার দিকে এই রকম একটা অনুর্বর সৌন্দর্য প্রকাশ পাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঝোপঝাপের মধ্যে ও গাছের তলায় একএকটা বেঞ্চি রয়েছে, এইটে সাধারণের বেড়াবার জায়গা। কী ভাগ্যি গাছপালা বসিয়ে এটা বাগান করে তোলা হয় নি, ‘আশ্রমবাসিনী’ প্রকৃতিকে সাজিয়ে-গুজিয়ে ‘শুদ্ধান্তযোগ্যা’ করে তোলা হয় নি। এখানে মানুষ এত অল্প ও জায়গা এত বড়ো যে মানুষের ঘেঁসাধেঁসি নেই, লন‍্ডনের বড়ো বড়ো বেড়াবার বাগানের মতো যে দিকে চাই সেই দিকেই ছাতা-হস্ত টুপি-মস্তক চোক-ধাঁধক ভিড়ের চার দিক থেকে আনাগোনা নেই; দূর-দূর বেঞ্চির মধ্যে নিরালা যুগলমূর্তি রোদ‍্দুরে ‘এক ছাতার ছায়ায় বসে আছে; কিম্বা হাত ধরাধরি করে নিরিবিলি বেড়াচ্ছে, পাছে পাশের লোক শুনতে পায় বলে গলা নাবিয়ে কথা কইতে হচ্ছে না কিম্বা প্রাণ খুলে হাসির ব্যাঘাত হচ্ছে না। যাঁরা বলেন গাছ-পালা লতা-পাতা ঘাস-গুল্ম কেবল ছাগল-গোরুদের কাছেই আমোদজনক, আরক্তকপোল আকর্ণচক্ষু আকুঞ্চিতকুন্তলের দিকেই যাদের আন্তরিক টান, তাঁরাও যে এখেনে এসে নিতান্ত নিরাশ হবেন তা নয়; তাই বলছি সব-শুদ্ধ জড়িয়ে common জায়গাটা খুব উপভোগ্য। এখনও গর্মিকাল শেষ হয় নি। এখেনে গর্মিকালে সকাল ও সন্ধে অত্যন্ত সুন্দর। গর্মির পূর্ণযৌবনের সময় রাত দুটো-তিনটের পরে আলো দেখা দিতে আরম্ভ করে, চারটের সময় রোদ‍্দুর ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে ও রাত্রি নটা-দশটার আগে দিনের আলো নেভে না। আমি একদিন ৫টার সময় উঠে commonএ বেড়াতে গিয়েছিলুম। উঁচু একটা পাহাড়ের ওপর একটা গাছের তলায় গিয়ে বসলুম, দূরে ছবির মতো শহর দেখা যাচ্ছে, একটি লোকও তখন ওঠে নি, একটুও কোয়াশা

১৮৭