পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পত্র

সেখেনে রোজ বিকেলে বেড়াতে যাই। সেটা একটা পাড়াগাঁর রাস্তা, পাথর দিয়ে বাঁধানো কিম্বা খুব সমতল করা নয়, গাড়ির চাকার দাগে এবড়ো-খেবড়ো উঁচুনিচু পাহাড়ে রাস্তা, দুধারে blackberry ও ঘন লতাগুল্মের বেড়া, বড়ো বড়ো গাছে ছায়া করে আছে, রাস্তার আশে পাশে ঘাস উঠেছে ও ঘাসের মধ্যে daisy প্রভৃতি বুনো ফুল ফুটে আছে, পাড়াগাঁয়ের ছোটোলোকেরা ধুলো-কাদা-মাখানো ময়লা কোট প্যাণ্টলুন ও ময়লা মুখ নিয়ে আনাগোনা করছে (বর্ণনার এ অংশটা বড়ো romantic হল না), ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলো তাদের লাল লাল ফুলো ফুলে মুখে বাড়ির দরজার বাইরে কিম্বা রাস্তায় খেলা করছে— এমন মোটাসোটা গোলগাল ছেলে কোনো দেশে দেখি নি। তাদের গাল-দুটোর অযথা প্রাদুর্ভাবে নাক ও চোখ নিতান্ত হীন অবস্থায় উপত্যকার অন্ধকারে পড়ে আছে, হাত-পা-গুলো অত্যন্ত মোটা, গাল দুটো অত্যন্ত লাল—এক-একটা জীবন্ত মাংসের ঢিবি আর-কি। এক-একটা বাড়ির কাছে ছোটো ছোটো পুকুরের মতো আছে, সেখেনে পোষা হাঁসগুলো ভাসছে; মাঠগুলো যদিও পাহাড়ে উঁচুনিচু, কিন্তু চষা জমি- এমন সমতল ও পরিষ্কার যে আমাদের দেশের কোনো সমভূমিতে এমন দেখি নি। ঘাসগুলো অত্যন্ত সবুজ ও তাজা, এখানে রৌদ্র তেমন তীব্র নয় বলে ঘাসের রঙ আমাদের দেশের মতন হেজে যায় না; তাই জন্যে এখানকার মাঠের দিকে চেয়ে থাকতে অত্যন্ত ভালো লাগে, অজস্র সবুজ রঙে চোখ যেন ডুবে যায়, উঁচুনিচু পাহাড় যতদূর দেখা যাচ্ছে ঘাসের সবুজ প্লাবনে প্লাবিত। মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো গাছ ও সাদা সাদা বাড়িগুলো দূর থেকে ছোটো ছোটো দেখাচ্ছে, এই রকম শূন্য মাঠ ছাড়িয়ে অনেক দূরে এসে এক-একটা প্রকাণ্ড পাইন;

১৮৯