পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পত্র

ইত্যাদি। কিন্তু আজকের রোদ্দুরে, গরমে, চার দিকের গাছপালায়, বসন্তের বাতাসে, পাখির ডাকে, যদি আমার এ রকম ভাব হয়ে থাকে তা হলে কি ‘লোকটা দেখছি নিতান্তই কবি হয়ে গিয়েছে’ ব’লে আমার একটা বদনাম হবার সম্ভাবনা আছে? দেশে যদি আমার ‘কান্ত’ থাকত তা হলে আজ হয়তো এই দুরন্ত বসন্তে একান্ত প্রাণান্ত ও ‘অন্ত’-অক্ষর-বিশিষ্ট আরও অসংখ্য ঘটনা ঘটত। এ দেশে ‘বসন্ত’ ব’লে বাস্তবিক একটা পদার্থ আছে। আমাদের দেশে বসন্ত নেই, কেবল বসন্ত বসন্ত বসন্ত করে বিরহীগুলো ভারী গোলমাল করে—বলে, মলয় বাতাসে তাদের গা দগ্ধ হয়! আরে, হবে না কেন? সে চৈত্রি মাসের মলয় বাতাসে সহজ মানুষের গা পুড়ে যায়, তাদের তো তবু অনেক দিনকার একটা বাঁধা দস্তুর আছে! সেই বিরহীগণ একবার এখানে আসুন দেখি— দেখি কেমন করে চন্দন আর পঙ্ক মাখেন, আর নলিনীপত্রের বাতাস খান!

 আমরা এখন Devonshireএর অন্তর্গত টর্কী (Torquay) বলে একটা নগরে আছি। এমন সুন্দর জায়গা আমি কখনও দেখি নি। সমুদ্রের ধারে। চার দিকে পাহাড়। অতি পরিষ্কার দিন। মেঘ নেই, কোয়াশা নেই, অন্ধকার নেই— চারি দিক হাস্যময়। চারি দিকে সবুজ বর্ণ, চারি দিকে গাছপালা, চারি দিকে পাখি ডাকছে, ফুল ফুটছে। যখন Tunbridge Wellsএ ছিলুম তখন ভাবতুম, এখেনে যদি মদন থাকে তবে সে ব্যক্তি তার ফুলশর তৈরি করবার জন্যে এত ফুল পায় কোথা? অনেক বনবাদাড় ঝোপঝাপ কাঁটাগাছ হাৎড়ে দু-চারটে বুনো ফুল নিয়েই কাজ চালাতে হয়। কিন্তু Torquayতে মদন যদি গ্যাট্‌লিঙের কামানের মতো এমন একটা বাণ উদ্ভাবন করে থাকে যার থেকে প্রতি মিনিটে হাজারটা করে তীর ছোঁড়া যায়, আর সেই বাণ দিন

১৯১