পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

যোগ দেওয়া পোষায় না। তাই যদি পারবে তবে এক দিকে এমন সুনীল সমুদ্র কী করতে, এমন রোদ‍্দুর উঠেছে কেন, এমন অতি পরিষ্কার আকাশ কী জন্যে? দু ছত্র বই পড়বে আর দু দণ্ড সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকবে, চেয়ে থেকে থেকে সাত শো ভাবনা ভাববে, অথচ ভাবছ কি না ভাবছ তা বিশেষ মনোযোগ না দিলে টের পাওয়া যাবে না, হঠাৎ বইয়ের দিকে চোখ পড়বামাত্র আবার পড়া আরম্ভ করবার জন্যে খুব দৃঢ় সংকল্প করবে, কিন্তু দ্বিতীয় ছত্রের একটা কমা পর্যন্ত যেই পৌঁচেছ অমনি মনটা অলক্ষিত ভাবে তোমার হাত ফসকে এমন একটা অদ্ভুত জায়গায় গিয়ে হাজির হবে যে জায়গার বিষয় ইতিপূর্বে তুমি কখনও ভাবও নি। মনটা সমস্ত দিন এই রকম লুকোচুরি খেলে বেড়ায়, একটা বইয়ের দেড় পাতা পড়তে আড়াই দিন লাগে।

 আমি বড়ো বাজে কথা বকে যাচ্ছি, এ কিন্তু টর্কীর বাতাসের গুণে। মনের ভিতর হাজারটা কথা চলাফেরা করে বেড়ায়, কিন্তু কথাগুলো হাত ধরাধরি করে আসে না, পরস্পরের মধ্যে চেনাশুনো নেই, খাপছাড়া দলছাড়া কথাগুলো মনের বড়ো রাস্তা দিয়ে খুব ঘেঁষাঘেঁষি করে চলেছে, কিন্তু পথিকদের মতো কেউ কারও কোনো এলাকা রাখে না। এমন ভাঙাচোরা কথার জোড়াতাড়া চিঠি পড়তে কি তোমাদের ভালো লাগছে?

 তুমি যদি এখানে আসতে, ভাই, তা হলে সমুদ্রের শব্দ শুনতে শুনতে, সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতে, ফুলের রাশে মাথা রেখে, ফুলের রেণু গায়ে মেখে, ফুলের মালা গেঁথে গেঁথে, ফুলের মধু খেতে খেতে, সন্ধে বেলায় সাগরবেলায়, দুজনেতে গলায় গলায়, ঘাসের ’পরে গাছের তলায়— গল্প হত, হাসি হত— ঠাণ্ডায় যদি কাশি হত বাড়ি যেতেম, চা খেতেম, হেসে খেলে দিন কাটাতেম। কেমন! লোভ

১৯৪