পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

তো বেরোনো গেল। চার দিকে নজর ক’রে দেখতে দেখতে চলেছি। চার দিকে ফুল আছে, গাছপালা আছে, পাহাড় পর্বত আছে, কিন্তু সে-সব তো পুরোনো— একটা নতুন কিছু বের করতে হবে। খানিক দূর গিয়ে দেখি একজনদের বাড়ির সুমুখে তারা একটি বাগান তৈরি করেছে, গাছগুলোর ডালপালা কেটে নানাবিধ আকারে পরিণত করা হয়েছে। কোনোটা গোল, কোনোটা বা অষ্টকোণ, কোনোটা মন্দিরের চুড়োর মতো। দেখে তো আমার তাক লেগে গেল। পাছে তাঁরা আগে থাকতে কিছু বলে ফেলেন এই ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে না খুলতে তাড়াতাড়ি আমি চেঁচিয়ে উঠেছি, ‘How beautiful!’ Miss Hকে তার একটা ছবি নিতে অনুরোধ করলেম। Miss H ও Miss N তো একেবারে হেসে আকুল; তাঁরা বলে উঠলেন, ‘Oh Mr. T, surely you are joking!’ Mr. T তো কালবিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি হেসে উঠলেন; যেন তিনি ঘোরতর একটা ঠাট্টা করে নিয়েছেন ও তার জন্যে মনে মনে ভারী তৃপ্তি ও গর্বের উদ্রেক হয়েছে। ভালো করে সামলাতে পেরেছি কিনা বলতে পারি নে। কিন্তু বড়ে। লজ্জা হল! ‘যাবৎ কিঞ্চিৎ’ বাক্যব্যয় না করেছিলেম ‘তাবচ্চ’ যথাকথঞ্চিৎ রূপে শোভা পেয়েছিলেম, কিন্তু প্রথম যে দিনই মুখ খুললেম সেই দিনই এই রকম হাস্যভাজন হতে হল! আমি কিন্তু Miss H ও Miss N-এর ভাব আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলেম না; তাঁরা একটা যাচ্ছেতাই বনবাদাড় দেখলে হাঁ করে চেয়ে থাকতেন আর অমন সুন্দর নানা আকৃতিতে ছাঁটা গাছপালা তাঁদের পছন্দসই হল না! সেদিন একটা ভিক্ষুক একটা ছেঁড়া টুপি পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল; হঠাৎ তাঁদের খেয়ালে কেমন লেগে গেল, তৎক্ষণাৎ তাকে আট গণ্ডা পয়সা (এক শিলিং) দিয়ে

১৯৬