পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পত্র

থেকে লন‍্ডনে চলে গিয়েছেনও আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ করে গিয়েছেন, কবিতাটা অনুবাদ-সমেত লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কী করা যায় বল তো। ভারী মুশকিলেই পড়েছি। আমি বলি কী, তুমি, ভাই, আমার হয়ে যত শীঘ্র পারো একটা কবিতা লিখে পাঠাও। বিষয়টা কী জান? টর্কী না দেখে টর্কীর বর্ণনা কি অসম্ভব মনে করছ? কিচ্ছুই না। ভালো জায়গা মাত্রেরই যে রকম বর্ণনা করা হয়, সেই রকম করলেই চুকে যাবে। অর্থাৎ, ফুল ফুটছে, পাখি ডাকছে, বাতাস বয়, জ্যোৎস্না ওঠে। যত প্রকার মিষ্টি জিনিস আছে, কোনো প্রকারে কবিতাটার মধ্যে গুঁজে দেওয়া। গাছপালার বর্ণনা সমাপ্ত করে যদি কোনো রকম করে খানিকটা অশ্রুজল, হৃদয়-ভাঙাভাঙি, নিরাশা, প্রিয়তমা, নিবিড় কুন্তল, সুদীর্ঘ নয়ন বসাতে পারো, তা হলেই জিনিসটা সর্বাঙ্গসুন্দর হবে। দেখো, nightingale, violet, forget-me-not, hyacinth প্রভৃতি কথাগুলো বাংলা কবিতার মধ্যে ভালো শোনাবে না। কিন্তু তার জন্যে বেশি ভেবো না। তুমি তো, কোকিল, পাপিয়া, মালতী, মল্লিকা, চামেলি, চম্পা লিখে দিয়ো; তার পরে অনুবাদ করে দেবার সময় আমি যা হয় একটা উপায় করে দেব।

 সমস্ত গল্পটা কি নিতান্ত আজগুবি মনে হচ্ছে? তবে আসল কথাটা খুলে বলছি। এটা আমার কথা নয়। এক ব্যক্তি তাঁর নিজের ঘটনা চিঠিতে আমাকে লিখেছিলেন, তাঁর চিঠি থেকে আমি উদ্ধৃত করে দিলেম। ব্যক্তিটি কে শুনবে? না— কাজ নেই বাপু, তোমরা আবার দশ জনের কাছে গল্প করে বেড়াবে। তোমাদের পেটে যদি একটি কথা থাকে! ভারী কৌতূহল হচ্ছে? আচ্ছা তাঁর নামের প্রথম অক্ষর লিখছি— শ। বুঝেছ?

১৯৯