পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োদশ পত্র

ভারী কাজে ব্যস্ত। হাই তোলবার সময় নেই। সময় যদি নিলেমে বিক্রি হয় তা হলে যত ব্যস্ত লোক সংসারে আছে আমি সকলের চেয়ে চড়া দাম ডাকি— এত কাজ! এমন অবস্থায় তোমাদের চিঠি লেখা সামান্য কথা? এত ব্যস্ত অবস্থায় লিখতে বসলে কী বিপদ ঘটে জানো? মনের বাক্সের চাবি পকেট হাৎড়ে খুঁজে পাওয়া যায় না; যদি বা বাক্স খোলা গেল তাড়াতাড়ি ব্যস্তসমস্ত ভাবে, হাঁস‍্ফাঁস্ করতে করতে, হুট‍্পাট্‌ ক’রে, যেখানে যত ভাব গোছানো ছিল খুঁজতে গিয়ে সমস্ত ওলটপালট বিপর্যস্ত করে ফেলি— এটা তুলছি, ওটা তুলছি, কিন্তু যেটা আবশ্যক সেইটে পাওয়া যায় না। লিখতে গেলে কথা পড়ে যায়। তাড়াতাড়িতে কর্ভার আগে ক্রিয়াকে আসন দেওয়া হয় ও কর্তা জায়গা না পেয়ে হয়তো কর্মের পিছনে হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকেরকার চিঠিতে এই রকম নানা ত্রুটি হবার সম্ভাবনা আছে, তবু কোনো প্রকারে আজকের মধ্যে চিঠিটা লিখতেই হবে। মনে আছে, তিন চার মেল আগে তোমাকে লাইন দশেকের যে-একটি চিঠি লিখেছিলেম তাতে তোমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেম যে, ‘শীঘ্রই তোমাকে একখানি বড়ো চিঠি লিখব।’ ‘লিখব’ ভবিষ্যৎকালবাচক ক্রিয়া। আজ থেকে প্রলয়কাল পর্যন্ত ভবিষ্যতের সীমা। তা ছাড়া যেমন একটি বাঁধা নিয়ম আছে যে, পয়সা চৌষট্টিটা হলেই টাকায় পরিণত হয়; তেমন কোনো শাস্ত্রেই এমন একটা ধরাবাঁধা নির্দিষ্ট নিয়ম নেই যাতে অবিসম্বাদে বলা যায় যে, ‘শীঘ্র’ এত আনা হলে ‘দেরি’ টাকায় পরিণত হয়। অতএব তোমাদের এমন একটি অনিশ্চিত অনির্দিষ্ট আশায় আর বেশি দিন ফেলে রাখতে চাই নে।

 Christmas ফুরোলো, আবার দেখতে দেখতে আর-একটা

২০০