পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়োদশ পত্র

উৎসব এসে পড়ল। আজ নূতন বর্ষের প্রথম দিন। কিন্তু তার জন্যে কিছুই গোলমাল দেখতে পাচ্ছি নে। নূতন বৎসর যে এখানে এমন নিঃশব্দপদসঞ্চারে আসবে তা জানতেম না। শুনেছি ফ্রান্সে লোকে নতুন বৎসরকে খুব সমাদরের সঙ্গে আবাহন করে। কাল পুরাতন বৎসরের শেষ রাত্রে আমাদের প্রতিবেশীরা বাড়ির জানলা খুলে রেখেছিল। তার কারণ এই হতে পারে যে, পাছে পুরানো বৎসর ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে থাকে, তার চলে যাবার ব্যাঘাত হয়— আর, পাছে নতুন বৎসর এসে জানলার কাছে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, তার ঘরে ঢুকতে বিশেষ কষ্ট হয়। এখেনে শীতে জানলা দরজা সমস্ত বন্ধ থাকে কি না, সুতরাং দরজা খুলে না দিলে নতুন বৎসর ঘরে ঢুকতে পান না, বাইরে দাঁড়িয়ে সর্দিতে মারা যান। আর পুরানো বৎসরের বাড়ি যাবার সময় হয়েছে, তাকে যদি অমন দরজা বন্ধ করে রাখো তবে সে ব্যক্তি দরজায় মাথা ঠুকে ঠুকে বাড়িময় দাপাদাপি করে বেড়াতে থাকবে। কিন্তু দুর্দশার কথা কী বলব, আমরা হচ্ছি ঘোরতর অসভ্য অজ্ঞান লোক—আমাদের বাড়ির জানলা কাল খুলে রাখা হয় নি, আমাদের চিমনির (ধোঁওয়ার নলের) ভিতর দিয়ে ছাড়া পুরাতন বৎসরের আর বেরোবার জায়গা ছিল না। আজ সকালে উঠে এই কথাটা আমাদের হঠাৎ মনে পড়ল। মনে পড়ে অবধি আমরা অনুতাপে সারা হচ্ছি। মনে করো প্রতি বাড়িতে ১৮৮০ খৃস্টাব্দ, আমাদের বাড়িতে ১৮৭৯। মনে করো যদি আমরা আর বাড়ির জানলা দরজা একেবারে না খুলি তা হলে আর পঁচাত্তর বৎসর বাঁচলেও ১৮৭৯ খৃস্টাব্দে মরি। কিম্বা যদি চিত্রগুপ্তের খাতায় ১৯৫৩ খৃস্টাব্দে তাঁর প্রভুর আলয়ে আমার শুভ পদার্পণ নির্দিষ্ট থাকে তা হলে সে শুভদিন আমার ভাগ্যে একেবারেই আসে না, চিরকালই আমি ১৮৭৯তে থাকি। মন্দ কী? চিরকালই যদি

২০১