পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়োদশ পত্র

তাঁর মনে হয় আমি কম করে খেয়েছি, তা হলে যতক্ষণ না তাঁর মনের মতো খাই ততক্ষণ পীড়াপীড়ি করেন। বিলেতে লোকে কাশিকে বড়ো ভয় করে; যদি দৈবাৎ আমি দিনের মধ্যে দুবার কেশেছি তা হলেই তিনি জোর করে আমার স্নান বন্ধ করান, আমাকে দশ রকম ওষুধ গেলান, শুতে যাবার আগে আমার পায়ে খানিকটা গরম জল ঢালবার বন্দোবস্ত করেন—তবে ছাড়েন। বাড়ির মধ্যে সকলের আগে বড়ো Miss K ওঠেন। তিনি নীচে এসে ব্রেক‍্ফাস্ট্ তৈরি হয়েছে কিনা তদারক করেন; অগ্নিকুণ্ডে দু চার হাতা কয়লা দিয়ে ঘরটি বেশ উজ্জ্বল করে রাখেন। খানিকক্ষণ বাদে সিঁড়িতে একটা দুদ্দাড় পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। বুড়ো K শীতে হিহি করতে করতে খাবার ঘরে গিয়ে উপস্থিত। তাড়াতাড়ি আগুনে হাত পা পিঠ বুক তাতিয়ে খবরের কাগজ হাতে খাবার টেবিলে এসে বসলেন। তাঁর বড়ো মেয়েকে চুম্বন করলেন, আমার সঙ্গে সুপ্রভাত অভিবাদন হল। লোকটা ভারী প্রফুল্ল। আমার সঙ্গে খানিকটা হাসি-তামাসা হল, খবরের কাগজ থেকে এটা ওটা পড়ে শোনাতে লাগলেন। তাঁর এক পেয়ালা কফি শেষ হয়ে গেছে, এমন সময়ে তাঁর আর দুটি মেয়ে এসে তাঁকে চুম্বন করলেন। তাঁদের সঙ্গে তাঁর বন্দোবস্ত ছিল যে, তাঁরা যে দিন Mr. Kর আগে উঠবেন সে দিন Mr. K তাঁদের পাঁচ সিকে দেবেন, আর যেদিন Mr. K তাঁদের আগে উঠবেন সে দিন Mr. Kকে তাঁদের চার আনা দিতে হবে। যদিও এত অল্প দিতে হত তবু Mr. Kর তাঁদের কাছে প্রায় দু তিন পাউণ্ড পাওনা হয়েছে। রোজ সকালে Mr. K তাঁর পাওনার জন্যে দাবি করেন। কিন্তু তাঁর দেনদাররা হেসেই উড়িয়ে দেন। Mr. K বলেন ‘এ ভারী অন্যায়!’ তিনি আমাকে মাঝে মাঝে মধ্যস্থ মেনে বলেন, ‘আচ্ছা,

২০৩