পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

কাপড়ে-চোপড়ে রঙে-চঙে তাঁরা তাঁদের ভাঙাচুরো রূপকে কোনো প্রকারে ঠেকো দিয়ে রেখেছেন মাত্র।

 পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছিল। ব―মহাশয়ের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তিনি লোক বড়ো ভালো। এমন ধাঁচের লোক বড়ো সচরাচর দেখা যায় না। তাঁর কথা অনর্গল, হাসি অজস্র, আহার অপরিমিত। সকলের সঙ্গেই তাঁর আলাপ, সকলের সঙ্গেই তিনি হাসি-তামাসা করে বেড়ান। তাঁর একটা গুণ আছে, তিনি কখনও বিবেচনা ক’রে, ভেবে-চিন্তে, মেজে-ঘ’ষে কথা কন না; ঠাট্টা করেন, সকল সময়ে তার মানে না থাকুক তিনি নিজে হেসে আকুল হন। তিনি তাঁর বয়সের ও পদমানের গাম্ভীর্য বুঝে হিসাব করে কথা কন না, মেপেজুকে হাসেন না ও দু দিক বজায় রেখে মত প্রকাশ করেন না―এই-সকল কারণে তাঁকে আমার বড়ো ভালো লাগত। তাঁর মনটা এখনও হামাগুড়ি দিচ্ছে―কত প্রকার যে ছেলেমানুষি করেন তার ঠিক নেই; ঘোরতর বিজ্ঞতার আতিশয্যে মুখটা অন্ধকার করে তাঁকে মোটা গলায় কথা কইতে কখনও শুনি নি। বৃদ্ধত্বের বুদ্ধি ও বালকদের শাদাসিদা নিশ্চিন্ত ভাব একত্রে দেখলে আমার বড়ো ভালো লাগে। তাঁর একটা স্বভাব আছে যে কাকেও তিনি তার পিতা-মাতা-প্রদত্ত নাম ধরে ডাকেন না―তিনি নিজে স্বতন্ত্র নামকরণ করেন। আমাকে তিনি ‘অবতার’ বলতেন, Gregory সাহেবকে ‘গড়গড়ি’ বলতেন, জাহাজের আর-এক যাত্রীকে ‘রুহিমৎস্য’ বলে ডাকতেন―সে বেচারির অপরাধ কী তা জানো? সাধারণ মানুষদের চেয়ে তার ঘাড়ের দিকটা কিছু খাটো ছিল, তার মাথা ও শরীরের মধ্যে একটা স্বতন্ত্র যোজকপদার্থ ছিল না বললেও হয়। এই জন্যে ব―মহাশয় তাকে মৎস্যশ্রেণীভুক্ত করেছিলেন।