পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

হয়ে নেবে এসেছেন। তাঁর বাপ মা বোনরা সবাই বললে ‘It is very foolish of you N’, কিন্তু বললে হয় কী! ‘নদী যবে চলে সিন্ধুপানে কার সাধ্য রোধে তার গতি।’ নদী তো বাপ মা বোনের উপরোধের শিক্ষাবাধা লঙ্ঘন ক’রে, কাশি হাঁচি ও রুমালে সর্দিঝাড়ার কলস্বর করতে করতে সিন্ধুর উদ্দেশে চলল। (উপমা কেমন হল বলো দেখি।) তখন বৃষ্টি পড়ছে, বরফ পড়ছে, রাস্তায় কাদা জমেছে। তার পরদিন সকালে সর্দিতে বেচারি মাথা তুলতে পারে না। এমন যন্ত্রণা!!

 যা হোক, আমার এই K-পরিবারের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সে দিন Miss N আমাকে বলছিলেন যে, প্রথম যখন তাঁরা শুনলেন যে একজন ভারতবর্ষীয় ভদ্রলোক তাঁদের মধ্যে বাস করতে আসছে, তাঁদের ভারী ভয় হয়েছিল। ‘ব্যক্তিটা কিরকম হবে না জানি! তার সাক্ষাতে আবার কিরকম আদব-কায়দা রেখে চলতে হবে! আমাদের কথা সে ভালো করে বুঝতে পারবে কি না!’— এই রকম নানাবিধ ভাবনায় তাঁদের তো রাতে ঘুম হয় না। যেদিন আমার আসবার কথা ছিল সেই দিন Miss A ও Miss J তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় এক হপ্তা বাড়িতে আসেন নি। তার পরে হয়তো যখন তাঁরা শুনলেন যে, একটা পোষমানা জীব তাঁদের বাড়িতে এসেছে, সে ব্যক্তির চেহারা দেখে বোধ হয় না যে তার কখনও মানুষের মগজের লাড়ু, মানুষের ঠ্যাঙের শিক-কাবাব বা খোকাখুকিভাজা খাওয়া অভ্যেস ছিল— মুখে ও সর্বাঙ্গে উল্কি নেই, ঠোঁট বিঁধিয়ে অলংকার পরে না— তখন তাঁরা বাড়িতে ফিরে এলেন। Miss J বলেন যে প্রথম প্রথম এসে যদিও আমার সঙ্গে কথাবার্তা করেছিলেন তবুও দু দিন পর্যন্ত আমার মুখ দেখেন নি।

২১০