পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

জানেন সমস্ত ভাষায় জাহাজের সমস্ত চাকর-বাকরদের অজস্র গাল দিতে আরম্ভ করেছেন ও দশ দিকে দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছেন। তাঁকে কখনো হাসতে দেখি নি; কারও সঙ্গে কথা নেই বার্তা নেই, আপনার ক্যাবিনে গোঁ হয়ে বসে আছেন। কোনো-কোনো দিন ‘ডেকে’ বেড়াতে আসতেন, বেড়াতে বেড়াতে যার দিকে একবার কৃপাকটাক্ষে নেত্রপাত করতেন তাকে যেন পিঁপড়াটির মতো মনে করতেন।

 প্রত্যহ খাবার সময়ে ঠিক আমার পাশেই B― বসতেন। তিনি একটি ইয়ুরাসীয়। কিন্তু তিনি ইংরাজের মতো গান গাইতে, শিষ দিতে, পকেটে হাত দিয়ে পা ফাঁক করে দাঁড়াতে সম্পূর্ণরূপে শিখেছেন। তিনি আমাকে বড়োই অনুগ্রহের চোখে দেখতেন। এক দিন এসে মহা গম্ভীর স্বরে বললেন―‘Young man, তুমি Oxford-এ যাচ্ছ? Oxford University বড়ো ভালো বিদ্যালয়।’ এ কথা তিনি না বললে Oxford University যেন মাটি হয়ে যেত। আমি একদিন ট্রেঞ্চ সাহেবের ‘Proverbs and Their Lessons’ বইখানি পড়ছিলেম, তিনি এসে বইটি নিয়ে শিষ দিতে দিতে দু-চার পাত উল্‌টিয়ে-পাল্‌টিয়ে বললেন ‘হ্যাঁ―ভালো বই বটে’। ট্রেঞ্চের শুভাদৃষ্ট! আমার উপর তাঁর কিছু মুরব্বিয়ানা ব্যবহার ছিল।

 এডেন থেকে সুয়েজে যেতে দিন পাঁচেক লেগেছিল। যারা ব্রিন্দিশি-পথ দিয়ে ইংলন্‌ডে যায় তাদের জাহাজ থেকে নেমে সুয়েজে রেলওয়ের গাড়িতে উঠে অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়াতে যেতে হয়; অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়ার বন্দরে তাদের জন্যে একটা স্টীমার অপেক্ষা করে―সেই স্টীমারে চ’ড়ে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইটালিতে পৌঁছিতে হয়। আমরা overland যাত্রী, সুতরাং আমাদের সুয়েজে নাবতে হল।