পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমরা তিনজন বাঙালি ও একজন ইংরাজ একখানি আরব নৌকা ভাড়া করলেম। মানুষের ‘divine’ মুখশ্রী কতদূর পশুত্বের দিকে নাবতে পারে, তা সেই নৌকার মাজিটার মুখ দেখলে জানতে পারতে। তার চোক দুটো যেন বাঘের মতো, কালো কুচ্‌কুচে রঙ, কপাল নিচু, ঠোট পুরু, সবসুদ্ধ মুখের ভাব অতি ভয়ানক। অন্যান্য নৌকার সঙ্গে দরে বনল না, সে একটু কম দামে নিয়ে যেতে রাজি হল। ব―মহাশয় তো সে নৌকায় বড়ো সহজে যেতে রাজি নন; তিনি বললেন আরবদের বিশ্বাস করতে নেই, ওরা অনায়াসে গলায় ছুরি দিতে পারে। তিনি সুয়েজের দুই-একটা ভয়ানক ভয়ানক অরাজকতার গল্প করলেন। কিন্তু যা হোক আমরা সেই নৌকায় তো উঠলেম। মাজিরা ভাঙা ভাঙা ইংরিজি কয় ও অল্প স্বল্প ইংরিজি বুঝতে পারে। আমরা তো কতক দূর নির্বিবাদে গেলেম। আমাদের ইংরাজ যাত্রীটির সুয়েজের পোস্ট আফিসে নাববার দরকার ছিল। পোস্ট্‌-আফিস অনেক দূর এবং যেতে অনেক বিলম্ব হবে, তাই মাঝিটি একটু আপত্তি করলে; কিন্তু শীঘ্রই সে আপত্তি ভঞ্জন হল। তার পরে আবার কিছু দূরে গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করলে ‘পোস্ট্‌-অফিসে যেতে হবে কি? সে দুই-এক ঘণ্টার মধ্যে যাওয়া অসম্ভব’―আমাদের রুক্ষস্বভাব সাহেবটি মহা ক্ষাপা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন 'your grandmother'। এই তো আমাদের মাঝি রুখে উঠলেন, 'What? mother? mother? what mother? don't say mother.' আমরা মনে করলুম সে সাহেবটাকে ধরে বুঝি জলেই ফেলে দিলে! আবার জিজ্ঞাসা করলে, 'What did say?' (অর্থাৎ, কী বললি?) আমরা রয়েছি বলেই বোধ হয় সাহেব তাঁর রোখ ছাড়লেন না। আবার বললেন 'your grandmother'। এই তো আর রক্ষা

১০