পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

নেই। মাঝিটা মহা তেড়ে উঠল। সাহেব গতিক ভালো নয় দেখে নরম হয়ে বললেন, 'You don't seem to understand what I say!' অর্থাৎ তিনি তখন grandmother বলাটা যে গালি নয় তাই প্রমাণ করতে ব্যস্ত। তখন সে মাঝিটা ইংরাজি ভাষা ছেড়ে ধমক দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘বস্‌―চুপ!’ সাহেব থতমত খেয়ে চুপ করে গেলেন, আর তার বাক্যস্ফূর্তি হল না! আবার খানিক দূর গিয়ে সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কতদূর বাকি আছে?’ মাঝি অগ্নিশর্মা হয়ে চেঁচিয়ে উঠল, 'Two shillings give, ask what distance! এই অপূর্ব ইংরাজির ভাষান্তর হচ্ছে: সবে দু শিলিং মাত্র ভাড়া দেবেন, তা আবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কতদূর! আমরা এই রকম বুঝে গেলেম যে, দু শিলিং ভাড়া দিলে সুয়েজ রাজ্যে এই রকম প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা আইনে নেই বুঝি। মাঝিটা যখন আমাদের এই রকম ধমক দিচ্ছে তখন অন্য অন্য দাঁড়িদের ভারী আমোদ বোধ হচ্ছে, তারা তো পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মুচকি মুচকি হাসি আরম্ভ করলে। মাঝি মহাশয়ের বিষম বদ মেজাজ দেখে তাদের হাসি সামলানো দায় হয়ে উঠেছিল। এক দিকে মাঝি ধমকাচ্ছে, এক দিকে দাঁড়িগুলো হাসি জুড়ে দিয়েছে, আমরা নিরুপায় রাগে ও লজ্জায় পুড়ছিলেম। মাঝিটির উপর প্রতিহিংসা তোলবার আর কোনো উপায় না দেখে আমরাও তিন জনে মিলে হাসি জুড়ে দিলেম―ও মনে মনে একটা সান্ত্বনা পেলেম যে ‘নীচ যদি উচ্চ ভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে’। এ রকম সুবুদ্ধি অনেক স্থলে দায়ে পড়ে খাটাতে হয়। মানে মানে সুয়েজ শহরে গিয়ে তো পৌঁছিলেম। আমার চক্ষে সুয়েজ শহরের নূতনত্ব এইটুকু লাগল যে, এর চেয়ে খারাপ শহর আমি আর দেখি নি। সুয়েজ শহর সম্বন্ধে আমার কিছু বলবার অধিকার নাই, কারণ

১১