পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমি সুয়েজের আদ মাইল জায়গার বেশি আর দেখি নি। শহরের চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণ করবার বাসনা ছিল, কিন্তু আমার সহযাত্রীদের মধ্যে যাঁরা পূর্বে সুয়েজ দেখেছিলেন তাঁরা বললেন, ‘এ পরিশ্রমে শ্রান্তি ও বিরক্তি ছাড়া অন্য কোনো ফললাভের সম্ভাবনা নেই।’ তাতেও আমি নিরুৎসাহ হই নি, কিন্তু শুনলেম গাধায় চড়ে বেড়ানো ছাড়া শহরে বেড়াবার আর কোনো উপায় নেই। শুনে শহরে বেড়াবার দিকে টান আমার অনেকটা কমে গেল। তার পর শোনা গেল এ দেশের গাধাদের সঙ্গে চালকদের সকল সময়ে মতের ঐক্য হয় না, চালক যে দিকে যাবার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন গাধাটির সকল সময়ে সে দিকে যাবার ইচ্ছে হয় না― তাঁরও একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন ইচ্ছে আছে―এই জন্যে সময়ে সময়ে দুই ইচ্ছের বিরোধ উপস্থিত হয়, কিন্তু প্রায় দেখা যায় গাধার ইচ্ছে পরিণামে জয়ী হয়। সুয়েজে এক প্রকার জঘন্য চোকের ব্যামোর অত্যন্ত প্রাদুর্ভাব―রাস্তায় অমন শত শত লোকের চোখ ঐ রকম রোগগ্রস্ত দেখতে পাবে। এখানকার মাছিরা ঐ রোগ চারি দিকে বিতরণ করে বেড়ায়। রোগগ্রস্ত চোখ থেকে ঐ রোগের বীজ আহরণ করে তারা অরুগ্ন চোখে গিয়ে বসে, এই রকমে চার দিকে ঐ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

 সুয়েজে আমরা রেলোয়ে উঠলেম। এ রেলগাড়ির অনেক প্রকার রোগ আছে। প্রথমতঃ শোবার কোনো বন্দোবস্ত নেই, কেননা বসবার জায়গাগুলি অংশে অংশে বিভক্ত। দ্বিতীয়তঃ এমন গজগামিনী রেলগাড়ি সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় না। সমস্ত রাত্রিই গাড়ি চলেছে। দিনের বেলা যখন জেগে উঠলেম তখন দেখলেম ধুলোয় আমাদের কেবল গোর হয় নি, আর সব হয়েছে। চুলে হাত দিতে গিয়ে দেখি, চুলে এমন এক স্তর মাটি জমেছে যে

১২