পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

বাঁধানো―তাতে বেশ পরিষ্কার থাকে, কিন্তু গাড়ির শব্দ বড়ো বেশি রকম হয়। খুব বড়ো বড়ো বাড়ি―বড়ো বড়ো দোকান―শহরটি খুব জমকালো বটে। অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়ার বন্দর খুব প্রকাণ্ড। অসংখ্য অসংখ্য জাহাজ এখানে আশ্রয় পায়। ইয়ুরোপীয়, মুসলমান, সকল প্রকার জাতিরই জাহাজ এ বন্দরে আছে; কেবল দুঃখের বিষয় হিন্দুদের জাহাজ নেই।

 চার পাঁচ দিনে আমরা ইটালিতে গিয়ে পৌঁছলেম। তখন রাত্রি একটা-দুটো হবে। গরম বিছানা ত্যাগ করে জিনিসপত্র নিয়ে আমরা জাহাজের ছাতে গিয়ে উঠলেম। জ্যোৎস্না রাত্রি, খুব শীত; আমার গায়ে বড়ো-একটা গরম কাপড় ছিল না, তাই ভারী শীত কচ্ছিল। আমাদের সুমুখে নিস্তব্ধ শহর, বাড়িগুলির জানেলা দরজা সমস্ত বন্ধ―সমস্ত নিদ্রামগ্ন। আমাদের যাত্রীদের মধ্যে ভারী গোল পড়ে গেল―কখনো শুনি ট্রেন পাওয়া যাবে, কখনো শুনি পাওয়া যাবে না। জিনিসপত্রগুলো নিয়ে কী করা যাবে ভেবে পাওয়া যায় না, জাহাজে থাকব কি বেরোব কিছুই স্থির নেই। একজন Italian Officer এসে আমাদের গুনতে আরম্ভ করলে―কিন্তু কেন গুনতে আরম্ভ করলে তা ভেবে পাওয়া গেল না। জাহাজের মধ্যে এই রকম একটা অস্ফুট জনশ্রুতি প্রচারিত হল যে, এই গণনার সঙ্গে আর আমাদের ট্রেনে চড়ার সঙ্গে একটা বিশেষ যোগ আছে। কিন্তু সে রাত্রে মূলেই ট্রেন পাওয়া গেল না। শোনা গেল, তার পর দিন বেলা তিনটের আগে ট্রেন পাওয়া যাবে না। যাত্রীরা মহা বিরক্ত হয়ে উঠল। অবশেষে সে রাত্রে ব্রিন্দিশির হোটেলে আশ্রয় নিতে হল।

 এই তো প্রথম য়ুরোপের মাটিতে আমার পা পড়ল। জানোই তো আমি কিরকম কাল্পনিক, মনে করেছিলেম য়ুরোপে পৌঁছিয়েই

১৪