পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

 তিনটের ট্রেনে আমরা ব্রিন্দিশি ছাড়লেম। রেলোয়ের পথের দু ধারে আঙুরের ক্ষেত্র, সে চমৎকার দেখতে। চার দিকের দৃশ্য এমন সুন্দর যে কী বলব। পর্বত নদী হ্রদ কুটির ক্ষেত্র ছোটো ছোটো গ্রাম প্রভৃতি যত-কিছু কবির স্বপ্নের ধন সমস্ত চারি দিকে শোভা পাচ্ছে। গাছপালার মধ্যে থেকে যখন কোনো-একটি দূরস্থ নগর―তার প্রাসাদচূড়া, তার চর্চের শিখর, তার ছবির মতো বাড়িগুলি আস্তে আস্তে চোখে পড়ে তখন বড়ো ভালো লাগে। এক-একটি দৃশ্য আমার এত ভালো লেগেছিল যে তা বর্ণনা করতে আমার ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যে বেলায় একটি পাহাড়ের নীচে অতি সুন্দর একটি হ্রদ দেখেছিলেম, তা আর আমি ভুলতে পারব না। তার চারি দিকে গাছপালা, সন্ধ্যার ছায়া জলে পড়েছে। সে অতি সুন্দর, তা আমি বর্ণনা করতে চাই নে।

 রেলোয়ে করে যেতে যেতে আমরা Mont Cenisএর বিখ্যাত tunnel দেখলেম। এই পর্বতের এ পাশ থেকে ফরাসীরা, ও পাশ থেকে ইটালিয়নরা এক সঙ্গে খুদতে আরম্ভ করে; কয়েক বৎসর খুদতে খুদতে দুই যন্ত্রীদল ঠিক মাঝামাঝি এসে পরস্পরের সমুখা-সমুখী উপস্থিত হয়। এই গুহা অতিক্রম করতে রেলগাড়ির ঠিক আধ ঘণ্টা লাগল। সে অন্ধকারে আমরা যেন হাঁপিয়ে উঠছিলেম। এখানকার রেলগাড়ির মধ্যে দিনরাত আলো জ্বালাই আছে; কেননা, এক-এক স্থানে প্রায় পাঁচ মিনিট অন্তর একএকটা পর্বতগুহা ভেদ করতে হয়―সুতরাং দিনের আলো খুব অল্পক্ষণ পাওয়া যায়। ইটালি থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সমস্ত রাস্তা―নির্ঝর নদী পর্বত গ্রাম হ্রদ দেখতে দেখতে আমরা পথের কষ্ট ভুলে গিয়েছিলেম। এই রাস্তাটুকু আমরা যেন একটি কাব্য পড়তে পড়তে গিয়েছিলেম।

১৭