পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পত্র

―বগলে ছাতি নিয়ে হু হু করে চলেছে, পাশের লোকদের ওপর ভ্রূক্ষেপ নেই, মুখে মহা ব্যস্ত ভাব প্রকাশ পাচ্ছে―সময় তাদের ফাঁকি দিয়ে না পালায় এই তাদের প্রাণপণ চেষ্টা। ইংলন্‌ডে যে কত রেলোয়ে আছে তার ঠিকানা নেই―সমস্ত লন্‌ডন-ময় রেলোয়ে, প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর এক-একটা ট্রেন যাচ্ছে। একটা রেলোয়ে স্টেশনে গেলে দেখা যায়, পাশাপাশি যে কত শত লাইন রয়েছে তার ঠিক নেই। লন্‌ডন থেকে ব্রাইটনে আসবার সময় দেখি―প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে উপর দিয়ে একটা, নীচে দিয়ে একটা, পাশ দিয়ে একটা, এমন চারি দিক থেকে হস্‌হাস্ করে ট্রেন ছুটেছে। সে ট্রেনগুলোর চেহারা দেখলে আমার লন্‌ডনের লোক মনে পড়ে―এ দিক থেকে, ও দিক থেকে, মহা ব্যস্তভাবে হাঁস্‌ ফাঁস্ করতে করতে চলেছে; এক তিল সময় নষ্ট করলে চলে না। দেশ তো এই এক রত্তি, ন’ড়ে চ’ড়ে বেড়াবার জায়গা নেই, দু পা চললেই ভয় হয় পাছে সমুদ্রে গিয়ে পড়ি। এখানে এত ট্রেন যে কেন ভেবে পাই নে! আমরা একবার লন্‌ডনে যাবার সময় দৈবাৎ ট্রেন মিস করেছিলেম, কিন্তু তার জন্যে বাড়ি ফিরে আসতে হয় নি―তার আধ ঘণ্টা পরেই আর-এক ট্রেন এসে হাজির।

 জীবিকার জন্যে এ দেশে যেমন যুঝাযুঝি এমন আর কোথাও দেখি নি। এ দেশের লোক প্রকৃতির আদুরে ছেলে নয়―কারুর নাকে তেল দিয়ে তাকিয়া ঠেসান দিয়ে বসে থাকবার যো নেই। একে তো আমাদের দেশের মতো এ দেশের জমিতে আঁচড় কাটলেই শস্য হয় না, তাতে শীতের সঙ্গে মারামারি করতে হয়। প্রথমতঃ শীতের উপদ্রবে এদের কত কাপড় দরকার হয় তার ঠিক নেই―তার পরে কম খেলে এ দেশে বাঁচবার যো নেই, শরীরে তাপ জন্মাবার জন্যে অনেক খেতে হয়। এ দেশের লোকের কাপড় কয়লা

২৫