পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

খাওয়া অপর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে চলে না, তার উপরে আবার মদ আছে। আমাদের বাঙলার খাওয়া নামমাত্র, কাপড় পরাও তাই। এ দেশে fittestরাই survive করে, এ দেশে যার ক্ষমতা আছে সেই মাথা তুলতে পারে, দুর্বল লোকদের এখানে রক্ষা নেই―একে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়, তাতে কার্যক্ষেত্রে সহস্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোখারুখি করছে।

 এ দেশের ছোটোলোকদের দেখলে মনে হয় না তাদের কিছুমাত্র মনুষ্যত্ব আছে―তারা যেন পশু থেকে এক ধাপ উঁচু। তাদের মুখ দেখলে নিদেন তাদের মধ্যে এক-এক জনের মুখ দেখলে আমার কেমন গা শিউরে ওঠে। তাদের মুখ দেখে আর কেউ 'human face divine' বলতে পারে না, পশুত্বভাবব্যঞ্জক তাদের সেই লাল-লাল মুখ দেখলে কেমন ঘৃণা হয়। আর, তারা যে ময়লা তা আর কী বলব। এই সে দিন একটা পুলিসের মোকদ্দমা দেখছিলেম―একটা ছোটোলোকের ছেলে মজা দেখবার জন্যে একটা ঘোড়ার জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিল! এমন পশুত্ব কখনো শুনেছ?

 ক্রমে ক্রমে এখানকার দুই-একজন লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হতে চলল। একটা মজা দেখছি, এখানকার লোকেরা আমাকে অতিদুগ্ধপোষ্য বালকের মতো মনে করে। মনে করে ইন্‌ডিয়া থেকে এসেছে, কিছু জানে না শোনে না, এ’কে দুচারটে জিনিস দেখিয়ে-শুনিয়ে বুঝিয়ে-শুঝিয়ে দেওয়া ভালো। এক দিন Dr.―এর ভাইয়ের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়েছিলেম, সে যে আমাকে বিরক্ত করে তুলেছিল তা আর বলবার কথা নয়। একটা দোকানের সুমুখে কতকগুলো ফোটোগ্রাফ ছিল―সে মনে করেছিল ফোটোগ্রাফ দেখে আমার একেবারে তাক লেগে যাবে, চক্ষু স্থির হয়ে

২৬