পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পত্র

যাবে―সে আমাকে সেইখানে নিয়ে গিয়ে ফোটোগ্রাফের মহা ব্যাখ্যান করতে আরম্ভ করে দিলে। সে আমাকে বুঝিয়ে দিলে যে, এক রকম যন্ত্র দিয়ে ঐ ছবিগুলো তৈরি হয়, মানুষে হাতে করে আঁকে না। আমার চার দিকে লোক দাঁড়িয়ে, আমার এমন লজ্জা করছিল। আমি তাকে বিশেষ করে বললেম যে, আমি ও খবরগুলি বিশেষ জানি। কিন্তু সে বিশ্বাস করবে কেন? একটা ঘড়ির দোকানের সামনে গিয়ে, ঘড়িটা যে একটা খুব আশ্চর্য যন্ত্র তাই আমার মনে সংস্কার জন্মাবার জন্যে চেষ্টা করতে লাগলেন। আমি তো তাঁর অনুগ্রহের জ্বালায় একেবারে জ্বালাতন হয়ে গিয়েছিলেম। একটা evening partyতে Miss―আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, আমি এর পূর্বে পিয়ানোর ডাক শুনেছি কি না? এ দেশের অনেক লোক হয়তো পরলোকের একটা ম্যাপ এঁকে দিতে পারে, কিন্তু ভারতবর্ষের সম্বন্ধে যদি এক বিন্দুও খবর জানে! ভারতবর্ষের লোকেরা গোখাদক নয় শুনলে হয়তো তারা চার দণ্ড হাঁ করে থাকে―ইংলন্‌ড থেকে কোনো দেশের যে কিছু তফাত আছে তা তারা কল্পনাও করতে পারে না। ভারতবর্ষের কথা দূরে থাক্‌―সাধারণ লোকেরা কত বিষয় জানে না তার ঠিক নেই। এই মনে করো, প― ডাক্তারকে আমার শিক্ষক খুব educated man বলে সুখ্যাতি করে থাকেন, কিন্তু তিনি Shelley বলে যে একজন কবি তাঁদের দেশে জন্মেছিল সেই খবরটুকু মাত্র জানেন, কিন্তু শেলী যে চেঞ্চি (Cenci) ব’লে একখানা নাটক লিখেছেন বা তাঁর Epipsychidion ব’লে যে একটি কবিতা আছে তা আমার মুখে প্রথম শুনতে পেলেন!

২৭