পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তৃতীয় পত্র

আমরা সে দিন ‘ফ্যান্সি বলে’ অর্থাৎ ছদ্মবেশ-নাচে গিয়েছিলেম―কত মেয়ে পুরুষ নানা রকম সেজেগুজে সেখানে নাচতে গিয়েছিল―সে দেখতে বেশ জমকালো। প্রকাণ্ড ঘর, গ্যাসের আলোয় আলোকাকীর্ণ, চার দিকে ব্যাণ্ড বাজছে―৬।৭০০ সুন্দরী, সুপুরুষ। ঘরে ন স্থানং তিলধারয়েৎ―চাঁদের হাট তো তাকেই বলে―যে দিকে পা বাড়াই বিবিদের গাউন, যে দিকে চোক ফেরাই চোক ঝলসে যায়। এক-একটা ঘরে দলে দলে স্ত্রী পুরুষে হাত ধরাধরি করে ঘুরে ঘুরে নাচতে আরম্ভ করেছে, দেখে মনে হয় যেন সবাই একেবারে আমোদে উন্মত্ত হয়ে গেছে। জ্ঞানশূন্য হয়ে যেন জোড়া জোড়া পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক-একটা ঘরে এমন ৭০।৮০ জন যুগল মূর্তি ঘুরছে―এমন ঘেঁষাঘেঁষি যে, কে কার ঘাড়ে গিয়ে পড়ে তার ঠিক নেই। একটা ঘরে শ্যাম্পেনের কুরুক্ষেত্র পড়ে গিয়েছে, মদ্যমাংসের ছড়াছড়ি, সেখানে লোকে লোকারণ্য। এক-একটা বিবির খাবার বিরাম নেই, দু-তিন ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত তার মুখ চলছে। এক-একটা বিবির নাচের বিরাম নাই, দু-তিন ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত তার পা চলছে। সকলেরই মুখে হাসি, মন অধিকার করবার যত প্রকার গোলাগুলি আছে বিবিরা তা অকাতরে নির্দয়ভাবে বর্ষণ করছেন। কিন্তু ভয় কোরো না, আমাদের মতো পাষাণ হৃদয়ে তার একটু আঁচড়ও পড়ে নি। একজন বিবি snow maiden অর্থাৎ নীহারকুমারী সেজে গিয়েছিলেন, তাঁর সমস্তই শুভ্র, সর্বাঙ্গে পুঁতির সজ্জা, আলোতে একেবারে ঝক্‌মক্‌ করছে। একজন মুসলমানিনী মেয়ে সেজে গিয়েছিলেন―একটা লাল ফুলো ইজের, ওপরে একটা রেশমের পেশোয়াজ, মাথায় টুপির মতো। এ কাপড়ে তাঁকে বেশ মানিয়ে গিয়েছিল। একজন আমাদের দিশি

২৮