পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পত্র

ময়লা হয়ে যেতে পারে কিম্বা তাঁদের হাতে যদি দস্তানা থাকে তাঁদের দস্তানা ময়লা হয়ে যেতে পারে। অন্য কোনো জায়গায় লেডিদের সঙ্গে সেক্‌হ্যান্‌ড্‌ করতে গেলে হাতের দস্তানা খুলে ফেলতে হয়, কিন্তু নাচের ঘরে তার আবশ্যক হয় না। যা হোক, আমরা তো সাড়ে নটার সময় তাঁদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেম। তখনও নাচ আরম্ভ হয় নি। ঘরের দুয়ারের কাছে গৃহকর্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি বিশেষ পরিচিতদের সঙ্গে সেক্‌হ্যান্‌ড্‌ করছেন, অপরিচিতদের প্রতি শিরঃকম্পন করছেন, সকলকে অভ্যর্থনা করছেন। এ গোরাদের দেশে নিমন্ত্রণসভায় গৃহকর্তার বড়ো উঁচু পদ নেই, তিনি সভায় উপস্থিত থাকুন বা শয়নগৃহে নিদ্রা দিন তাতে কারও বড়ো কিছু এসে যায় না। আমরা ঘরে প্রবেশ করলেম, গ্যাসের আলোয় ঘর আলোকাকীর্ণ, কিন্তু শত শত রমণীদের রূপের আলোকে সে গ্যাসের আলো ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছে। চারি দিক উজ্জ্বল, হাস্যময়। রূপের উৎসব পড়ে গিয়েছে, ঘরের ভিতরে প্রবেশ করবামাত্রই চোখে ধাঁধা লেগে যায়। ঘরের এক পাশে পিয়ানো বেহালা বাঁশি বাজছে, ঘরের চারি ধারে কৌচ চৌকি সাজানো রয়েছে। ইতস্ততঃ দেয়ালের আয়নার ওপর গ্যাসের আলো ও রূপের প্রতিবিম্ব পড়ে ঝক্‌মক্‌ করছে। নাচবার ঘরের মেজে কাঠের, তার ওপর কার্পেট প্রভৃতি কিছু পাতা নেই, সে কাঠের মেজে এমন পালিশ-করা যে পা পিছলে যায়। এখানে ঘর যত পিছল হয় ততই নাচবার উপযুক্ত হয়। কেননা, পিছল ঘরে নাচের গতি খুব সহজ ও সুন্দর হয়, পা কোনো বাধা পায় না, আর আপনা-আপনি পিছ্‌লে আসে। ঘরের চারি দিকে আশে-পাশে যে-সকল বারান্দার মতো আছে, তাই একটু ঢেকে ঢুকে, গাছপালা দিয়ে, দুই-একটি কৌচ চৌকি রেখে lover's bower (প্রণয়ীদের

৩১