পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পত্র

দুটো মোটা, দাড়ির দিকটা অত্যন্ত ছোটো, সব চেয়ে তাঁর স্বভাব খিট্‌মিটে―তাঁর সঙ্গে নাচতে গিয়ে যত প্রকার দোষ হওয়া সম্ভব তা ঘটেছিল। যেমন তাস খেলবার সময়ে খারাপ partner পেলে তার ’পরে তার দলের লোক চটে যায়, তেমনি নাচের সময় খারাপ partner পেলে মেয়েরা ভারী চটে যায়। তিনি বোধ হয় নাচবার সময় মনে মনে আমার মরণ কামনা করেছিলেন। নাচ ফুরিয়ে গেলে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেম, তিনিও নিস্তার পেলেন। আমি একবার একটি সুন্দরী partner পেয়েছিলেম। তাঁর সঙ্গে না নাচতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেম। কিন্তু গৃহকর্ত্রী আমাকে বিশেষ করে নাচতে অনুরোধ করলে, পীড়াপীড়ির পর নাট্যশালায় অবতরণ করলেম―কোনো মতে নাচটা সমাপন করে দে ছুট! প্রথমে নাচের ঘরে ঢুকেই আমি একেবারে চমকে উঠেছিলেম। দেখি যে, শত শ্বেতাঙ্গিনীদের মধ্যে আমাদের একটি ভারতবর্ষীয়া শ্যামাঙ্গিনী রয়েছেন। দেখেই তো আমার বুকটা একেবারে নেচে উঠেছিল। আমার তাকে এমন ভালো লাগল যে কী বলব! তার সঙ্গে কোনো মতে আলাপ করবার জন্যে আমি তো ছটফট করে বেড়াতে লাগলেম্‌। কতদিন মনে করো কালো মুখ দেখি নি। আর, তার মুখে আমাদের বাঙালি মেয়েদের ভালোমানুষি নম্রভাব এমন মাখানো যে কী বলব! আমি অনেক ইংরেজ মেয়েদের মুখে ভালোমানুষি নরম ভাব দেখেছি, কিন্তু এর সঙ্গে তার কী একটা তফাত আছে বলতে পারি নে। তার চুল বাঁধা আমাদের দেশের মতো, শাদা মুখ দেখে দেখে আর উগ্র অসংকোচ সৌন্দর্য দেখে দেখে আমার মনটা ভিতরে ভিতরে বড়ো বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল―এতদিনে তাই বুঝতে পারলেম। সেই শ্বেতাঙ্গিনীদের সভায় একটি কালো মিষ্টি মুখ দেখে আমার মনটা চুম্বকের মতো সেই দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল।

৩৫