পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পত্র

দেশে নয়―এ দেশের সূর্যই যখন অনেত্রম্পশ্যরূপ তখন এ দেশের মেয়েরাও তো অসূর্যম্পশ্যরূপা হবেই।

 সাড়ে আটটার কমে আমাদের বিছানা থেকে ওঠা হয় না। ছটার সময় বিছানা থেকে উঠলে এ দেশের লোকেরা এত আশ্চর্য হয় যে, দিন-দুপরে একটা স্কন্ধকাটা দেখলেও তারা সে রকম আশ্চর্য হয় না। তার পরে উঠেই আমি বোজ ঠাণ্ডা জলে স্নান করি। এ দেশের লোকেরা যাকে স্নান বলে আমি সে রকম স্নানের বিড়ম্বনা করি নে। আমি মাথায় জল ঢেলে স্নান করি; গরম জল নয়―এখানকার এই বরফের মতো ঠাণ্ডা জল। মাথায় জল ঢেলে স্নান করাকে এ দেশের লোকে অসাধারণ বীরত্ব মনে করে। আমার নাম যে কেন এখনও ছাপার কাগজে উঠে যায় নি আমি তাই ভাবছি। নটার সময় আমাদের খাবার আসে। এখানকার ৯টা আর সেখানকার ৬টা সমান। আমাদের আরএকটি খাওয়া দেড়টার সময়, সেইটিই প্রধান খাওয়া―মধ্যাহ্নভোজন। প্রত্যহ ... পার করছি তাতে কিছুমাত্র দ্বিধা নেই, মাঝে মাঝে ভেড়ার পদসেবাও করে থাকি। মধ্যে একবার চা রুটি প্রভৃতি আসে, তার পরে রাত আটটার সময় আর-একটি সুপ্রশস্ত ভোজনের আয়োজন হয়ে থাকে―এই রকম আমাদের দিনের প্রধান কার্য হচ্ছে খাওয়া।

 অন্ধকার হয়ে আসছে, চারটে বাজে ব’লে, চারটে বাজলে পরে আলো না জ্বেলে পড়া দুষ্কর। এখানে প্রকৃত পক্ষে ৯টার সময় দিন আরম্ভ হয়, কেননা গড়ে রোজ আটটার কমে ওঠা হয় না। এখানকার লোকের ছটার সময় হয়তো দুপর রাত্তির, এ দেশের প্যাঁচারা ছাড়া আর কেউ তখন জেগে নেই। তার পরে আবার বৈকাল চারটের সময়েই এখানকার দিনের আলো নিভে

৩৭