পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

যায়, তাই এখানকার দিনগুলো এমন ছোটো মনে হয় যে কী বলব। এখানকার দিনগুলো যেন দশটার সময় আপিস করতে আসে, আর চারটের সময় বাড়ি ফিরে যায়। এখানে কাজ ক’রে অবসর পাওয়া দূরে থাক্‌, কাজ করবার অবসর পাওয়া যায় না। সন্ধ্যের পর আমার মনের জড়-অবস্থা হয়, এমন জড়-অবস্থা হয় যে তখন আর কোনো কাজ করবার শক্তি থাকে না। সুতরাং আমার এ রকম ছোটো দিনের সঙ্গে কারবার করা পুষিয়ে উঠছে না―ট্যাঁক-ঘড়ির ডালা খুলতে খুলতেই এ দেশের দিন চলে যায়। এখানকার রাত্তির তেমনি ঘোড়ায় চড়ে আসে, আর পায়ে হেঁটে চলে যায়―সে আর ফুরোয় না। এখানকার দিনগুলি যে কেবল অচিরস্থায়ী তা নয়, যতক্ষণ থাকে তাই নাহয় একটু ভদ্রলোকের মতো থাক্‌, তা নয়―মুখ ভার করে খুঁৎখুঁৎ করতে করতেই তাঁর সমস্ত সময় চলে যায়।

 মেঘ, বৃষ্টি, বাদল, অন্ধকার, শীত―এ আর এক দণ্ডের তরে ছাড়া নেই। আমাদের দেশে যখন বৃষ্টি হয় তখন মুষলধারে বৃষ্টির শব্দ, মেঘ, বজ্র, বিদ্যুৎ, ঝড়―তাতে একটা কেমন উল্লাসের ভাব আছে। এখানে এ তা নয়, এ টিপ্ টিপ্ করে সেই একঘেয়ে বৃষ্টি ক্রমাগতই অতি নিঃশব্দ পদসঞ্চারে চলছে তো চলছেই―সে কেমন একটা ভিজে-ভিজে ভাব। রাস্তায় কাদা, পত্রহীন গাছগুলো স্তব্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে, কাঁচের জানলার উপর টিপ্ টিপ্ করে জল ছিটিয়ে পড়ছে, কেমন একটা অন্ধকার-অন্ধকার করে এসেছে। আমাদের দেশে যেমন স্তরে স্তরে মেঘ করে, এখানে আকাশ সমতল―মনে হয় না যে মেঘ করেছে, মনে হয় কোনো কারণে আকাশের রঙটা ঘুলিয়ে গিয়েছে। সমস্তটা জড়িয়ে স্থাবর জঙ্গমের যে কী-একটা অবসন্ন মুখশ্রী দেখা যায় তা বর্ণনা

৩৮