পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পত্র

করা যায় না। লোকের মুখে সময়ে সময়ে শুনতে পাই বটে যে কাল বজ্র হয়েছিল, কিন্তু বজ্রের নিজের এমন গলার জোর নেই যে তাঁর মুখ থেকেই সে খবরটা পাই—এখানকার বজ্রধ্বনি শুনতে গেলে বোধ হয় microphone ব্যবহার করতে হয়। সূর্য তো এখানে গুজবের মধ্যে হয়ে পড়েছে। যদি অনেক ভাগ্যবলে সকালে উঠে সূর্যের মুখ দেখতে পাই, তবে তখনি আবার মনে হয়—

‘এমন দিন না রবে— তা জানো’।

 এই অন্ধকার দেশে আমার বুদ্ধি-শুদ্ধি সমস্ত যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে—কিছু লেখা বেরোয় না, এমন-কি গুছিয়ে একটা চিঠিও লিখতে পারি নে। চিঠি লেখবার বা অন্য কিছু লেখবার কথা মনে হলেই আমার কেমন হাই উঠতে থাকে। দেশের সে সূর্যালোক ও জ্যোৎস্না কেমন সুখস্বপ্নের মতো মনে পড়ে। আমাদের দেশে সেই সকাল-সন্ধ্যার ও জ্যোৎস্নারাত্রির মর্যাদা এ দেশে এসে বিশেষ করে বুঝতে পেরেছি।

 দিনে দিনে শীত খুব ঘনিয়ে আসছে। লোকে বলছে, কাল পরশুর মধ্যে হয়তো আমরা বরফ পড়া দেখতে পাব। তাপমান যন্ত্র ৩০ ডিগ্রী পর্যন্ত নেবে গিয়েছে— সেই তো হচ্ছে freezing point, অল্পস্বল্প frost দেখা দিয়েছে। রাস্তার মাটি খুব শক্ত হয়ে গিয়েছে, কেননা তার মধ্যে যা জল ছিল সমস্ত জমাট হয়ে গিয়েছে, রাস্তার মাঝে মাঝে কাচের টুকরোর মত শিশির খুব শক্ত হয়ে জমে গিয়েছে, দুই-এক জায়গায় ঘাসের মধ্যে কে যেন চুন ছড়িয়ে দিয়েছে— বরফের এই প্রথম সূত্রপাত দেখছি। খুবই শীত পড়েছে, এক-এক সময়ে হাত পা এমন ঠাণ্ডা হয়ে যায় যে জ্বালা করতে থাকে। সকালে লেপ থেকে বেরোতে যত ভাবনা হয়, সহমরণে যেতে হলেও আমার তত ভাবনা হয় না। কিন্তু

৩৯