পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমার বীরত্বের কাহিনী শুনলে হয়তো তুমি অবাক হয়ে যাবে। সেই সকালে উঠেই আমি বরফের মত ঠাণ্ডা জল মাথায় ঢেলে স্নান করি। মনে হয় মাথাটা যেন খসে পড়ল, সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে যায়―কিন্তু তার পরেই যে প্রতিক্রিয়া উপস্থিত হয় তাতে সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে যেতে হয়।

 আমাদের দিশি কাপড় দেখে রাস্তার এক-এক জন সত্যি-সত্যি হেসে ওঠে, এক-এক জন এত আশ্চর্য হয়ে যায় যে তাদের আর হাসবার ক্ষমতা থাকে না। কত লোক আমাদের জন্যে গাড়ি চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছে, তারা আমাদের দিকে এত হাঁ ক’রে চেয়ে থাকে যে পেছনে গাড়ি আসছে হুঁশ নেই। প্যারিসে আমাদের গাড়ির পিছনে পিছনে এক দঙ্গল ইস্কুলের ছোকরা চীৎকার করতে করতে ছুটেছিল, আমরা তাদের সেলাম করলেম। এক-এক জন আমাদের মুখের উপর হেসে ওঠে, এক এক জন চেঁচাতে থাকে―'Jack, look at the blackies!' কিন্তু আমি সে-সব কিছুই গ্রাহ্য করি নি, আমার এক তিলও লজ্জা করে না।

চতুর্থ পত্র

আমরা সেদিন House of Commonsএ গিয়েছিলেম, ভারী নিরাশ হয়েছিলেম। পার্লামেণ্টের অভ্রভেদী চূড়া, প্রকাণ্ড বাড়ি, হাঁ-করা ঘরগুলো দেখলে খুব তাক লেগে যায়; কিন্তু ভিতরে গেলে তেমন ভক্তি হয় না। একটা বড়ো ঘরে House বসে, ঘরের চারি দিকে গোল গ্যালারি, তার এক দিকে দর্শকেরা বসে, আর-এক দিকে খবরের কাগজের reporterরা বসে। গ্যালারির

৪০