পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পত্র

এল, তখন হৌস থেকে অধিকাংশ মেম্বর উঠে চলে গেলেন। দুইএকটা বক্তৃতার পর ব্রাইট উঠে সিভিল সার্ভিসের রাশি রাশি দরখাস্ত হৌসে দাখিল করলেন। বৃদ্ধ ব্রাইটকে দেখলে অত্যন্ত ভক্তি হয়, তাঁর মুখে ঔদার্য ও দয়া যেন মাখানো। ব্রাইটকে যখন আমি প্রথম দেখি, যখন আমি তাঁকে ব্রাইট বলে চিনতেম না, তখন অনেক ক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মুখ থেকে আমি চোখ ফেরাতে পারি নি। দুর্ভাগ্যক্রমে ব্রাইট সে দিন কিছু বক্তৃতা করলেন না। হৌসে অতি অল্প মেম্বরই অবশিষ্ট ছিলেন, যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিদ্রার আয়োজন করছিলেন— এমন সময়ে গ্ল্যাড‍্স্টোন উঠলেন। গ্ল্যাড্‌স্টোন ওঠবামাত্রেই সমস্ত ঘর একেবারে ঘোর নিস্তব্ধ হয়ে গেল, গ্ল্যাড‍্স্টোনের স্বর শুনতে পেয়ে আস্তে আস্তে বাইরে থেকে দলে দলে মেম্বর আসতে লাগলেন, দুই দিকের বেঞ্চি পূরে গেল। তখন পূর্ণ উৎসের মতো গ্ল্যাড্‌স্টোনের বক্তৃতা উৎসারিত হতে লাগল, সে এমন চমৎকার যে কী বলব! কিছুমাত্র চীৎকার তর্জন-গর্জন ছিল না, অথচ তাঁর প্রতি কথা ঘরের যেখানে যে-কোনো লোক বসেছিল সকলেই একেবারে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল। গ্ল্যাড্‌স্টোনের কী-এক রকম দৃঢ় স্বরে বলবার ধরণ আছে, তাঁর প্রতি কথা মনের ভিতর গিয়ে যেন জোর করে বিশ্বাস জন্মিয়ে দেয়। একটা কথায় জোর দেবার সময় তিনি মুষ্টি বদ্ধ করে একেবারে নুয়ে নুয়ে পড়েন, যেন প্রত্যেক কথা তিনি একেবারে নিংড়ে নিংড়ে বের করছেন। আর সেই রকম প্রতি জোর দেওয়া কথা দরজা ভেঙেচুরে যেন মনের ভিতর প্রবেশ করে। আইরিশ মেম্বর সলিভানের সঙ্গে গ্ল্যাড্‌স্টোনের বাগ্মিতার তফাত কী জানো? সলিভান খুব হাত পা নেড়ে, চেঁচিয়েমেচিয়ে, হুট‍্পাট্ করে বলে যান। তাঁর বক্তৃতা মনে লাগে বটে, কিন্তু সে ভাব বড়ো বেশিক্ষণ থাকে না। তাঁর তর্জন-গর্জনও যেমন থামে,

৪৫