পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পত্র

আজকাল খুব প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন। হাউসে যে-কোনো কথা ওঠে, প্রায় সকল বিষয়েই তাঁরা বাধা দেন; আর প্রতি প্রস্তাবে এক জনের পর আর-এক জন করে উঠে দীর্ঘকালব্যাপী বক্তৃতায় হাউসকে বিব্রত করে তোলেন। আমি ঠিক করে বলতে পারি নে যে, আইরিশ মেম্বরেরা আগে থাকতেই ঐ রকম আচরণ করতেন বলেই অন্যান্য মেম্বরেরা তাঁদের প্রতি ঐ রকম অত্যাচার করেন, কি অন্যান্য মেম্বরদের কাছে অত্যাচার সয়ে সয়ে আইরিশ মেম্বরেরা এই রকম প্রতিহিংসা তুলতে আরম্ভ করেছেন। আমার স্বভাবতই আইরিশ মেম্বরদের প্রতি টান, সুতরাং স্বভাবতই আমার বিশ্বাস হয় যে শেষোক্তটাই বেশি সম্ভব। এর কারণ সহজেই নির্দেশ করা যায়—মনে করো আইরিশদের অনুগ্রহ করে পার্ল্যামেণ্টে স্থান দেওয়া হয়েছে, আইরিশরা সেই অনুগ্রহ পেয়েই যদি শান্ত ছেলেগুলির মত হৌসে বসে থাকত, তাদের অস্তিত্ব আছে কি না আছে যদি জানা না যেত, তা হলে অনুগ্রহকর্তারা সন্তুষ্ট থাকতেন। কিন্তু তারাও যদি অন্যান্য মেম্বরদের মতো বাদানুবাদ করতে থাকে, নিজের মত প্রকাশ করে, অন্য লোকের মতো প্রতিবাদ করে, তা হলে সকলের চটে ওঠা খুব স্বাভাবিক। ইন্‌ডিয়াকৌন্‌সিলে যদি এক দল ভারতবর্ষীয় মেম্বর থাকে, আর তারা যদি জুজুর মতো বসে না থাকে, সকল কথাতেই ‘হাঁ’ না দিয়ে যায়, আর সংকুচিত স্বরে কিছু বলতে গিয়ে অমনি গবর্ন‍্মেণ্টের নীরব চোখ-রাঙানি দেখে থতমত খেয়ে যদি না বসে পড়ে, কিম্বা গবর্ন‍্মেণ্টের উৎসাহজনক পিঠ-থাবড়া খেয়ে আহ্লাদে যদি গলে না পড়ে, তা হলে তাদের কী দুর্দশা হয় মনে করে দেখো দেখি! তা হলে দুদিন বাদেই তাদের ঘাড়ে হাতটি দিয়ে বলা হয়, ‘বেরোও, বেরোও বাপুগণ!’ ইংলন্‌ডে, সভ্যদেশে, সমস্ত য়ুরোপের চোখের

৪৭