পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

তখন জাহাজে থাকেন তাঁরা টাটকা ভারতবর্ষ থেকে আসছেন; সে ‘হুজুর ধর্মাবতার’গণ কৃষ্ণবর্ণ দেখলে নাক তুলে, ঠোঁট ফুলিয়ে, ঘাড় বেঁকিয়ে চলে যান ও এই ঘোরতর তাচ্ছিল্যের স্পষ্ট লক্ষণগুলি সর্বাঙ্গে প্রকাশ ক’রে কৃষ্ণচর্মের মনে দারুণ বিভীষিকা সঞ্চার করেছেন জেনে মনে মনে পরম সন্তোষ উপভোগ করেন। মাঝে মাঝে ভদ্র ইংরাজ দেখতে পাবে, তাঁরা হয়তো তোমাকে নিতান্ত সঙ্গীহীন দেখে তোমার সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করবেন। জানবে তাঁরা যথার্থ ভদ্র, অর্থাৎ ভদ্র ও উচ্চ পরিবারের লোক, বংশাবলীক্রমে তাঁরা ভদ্রতার বীজ পেয়ে আসছেন, তাঁরা এখানকার কোনো অজ্ঞাত কুল থেকে অখ্যাত নাম নিয়ে ভারতবর্ষে গিয়ে হঠাৎ ফেঁপে ফুলে ফেটে আটখানা হয়ে পড়েন নি। এখানকার গলিতে গলিতে যে ‘জন জোন্‌স্‌ টমাস’-গণ কিলবিল করছে, যাদের মা বাপ বোনকে একটা কসাই একটা দরজী ও এক জন কয়লা-বিক্রেতা ছাড়া আর কেউ চেনে না, তারা ভারতবর্ষের যে অঞ্চলে পদার্পণ করে সে অঞ্চলে ঘরে ঘরে তাদের নাম রাষ্ট্র হয়ে যায়—যে রাস্তায় তারা চাবুক হস্তে ঘোড়ায় চড়ে যায় (হয়তো সে চাবুক কেবল মাত্র ঘোড়ার জন্যেই ব্যবহার হয় না) সে রাস্তা-সুদ্ধ লোক শশব্যস্ত হয়ে তাদের পথ ছেড়ে দেয়— তাদের এক-একটা ইঙ্গিতে ভারতবর্ষের এক-একটা রাজার সিংহাসন কেঁপে ওঠে— এ রকম অবস্থায় সে ভেকদের পেট উত্তরোত্তর ফুলতে ফুলতে যে হস্তীর আকার ধারণ করবে আমি তো তাতে বিশেষ অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাই নে। তারা রক্তমাংসের মানুষ বৈ তো নয়। যে দেশেই দেখো-না কেন, ক্ষুদ্র যখনি মহান পদ পায় তখনি সে চোক রাঙিয়ে, বুক ফুলিয়ে, মহত্ত্বের একটা আড়ম্বর আস্ফালন করতে থাকে। এর অর্থ আর কিছু নয়— তারা মহত্ত্বের শিক্ষা পায় নি। যে সাঁতার

৫২