পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

অনুরোধে তারা আমাদের মনোরঞ্জন করবার জন্যে যে-সকল কথাবার্তা হাস্যালাপ করে আমরা তার ঠিক মর্মগ্রহণ করতে পারি নে, আমরা হঠাৎ মনে করি—আমাদের ওপরেই এই মহিলাটির বিশেষ অনুকূল দৃষ্টি, নইলে এত হাসি এত কথা কেন? যা হোক, আমাদের বঙ্গযুবকটি তাঁর এই প্রথম ডিনারের নিমন্ত্রণে এক জন মহিলা, বিশেষতঃ এক জন বিবির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টহাসি ও মিষ্টালাপ পেয়ে অত্যন্ত উল্লসিত আছেন। তিনি মিস্‌কে ভারতবর্ষ-সংক্রান্ত অনেক কথা বললেন; বললেন— তাঁর বিলেত অত্যন্ত ভালো লাগে, ভারতবর্ষে ফিরে যেতে তাঁর ইচ্ছে করে না, ভারতবর্ষে অনেক প্রকার কুসংস্কার আছে। কথা বলার অভিপ্রায় এই যে, বিবিটির মনে বিশ্বাস হবে যে তিনি নিজে সমস্ত কুসংস্কার হতে মুক্ত। শেষকালে দুই-একটি মিথ্যে কথাও বললেন; বললেন, তিনি সুন্দরবনে বাঘ শিকার করতে গিয়েছিলেন, একবার নিতান্ত মরতে মরতে কেবল অসমসাহসিকতা করে বেঁচে গিয়েছিলেন। মিস্‌টি অতি সহজে বুঝতে পারলেন যে, এই যুবকের তাঁকে অতি ভালো লেগেছে, তিনি যথেষ্ট সন্তুষ্ট হলেন ও তাঁর মিষ্টতম বাক্যবাণ যুবকের প্রাণে হানতে লাগলেন।—‘আহা কী গোছালো কথা! কোথায় আমাদের দেশের মেয়েদের মুখের সেই নিতান্তশ্রমলভ্য দুই-একটি ‘হাঁ না’— যা এত মৃদু যে ঘোমটার সীমার মধ্যেই মিলিয়ে যায়— আর কোথায় এখানকার বিম্বৌষ্ঠনিঃসৃত অজস্র মধুধারা যা অযাচিত ভাবে মদিরার মতো মাথার শিরায় শিরায় প্রবেশ করে।'—প্রথম ডিনারের নিমন্ত্রণে আমাদের বঙ্গযুবকের মনে এই কথাগুলি ওঠে। সেই দিনেই তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে চিঠি লেখা স্থগিত করলেন!

 এখন তোমরা হয়তো বুঝতে পারছ, কী কী মশলার সংযোগে

৫৯