পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

একবার দেখতে পাও। তিনি প্রতি কথা এমন ভাবে এমন স্বরে বলেন যে, যেন সেই কথাগুলি নিয়ে সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর বিশেষ বোঝাপড়া হয়ে একটা স্থিরসিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। যিনি প্রতিবাদ করছেন তাঁকে তিনি স্পষ্টাক্ষরে বলেন ‘ভ্রান্ত’, কখনও বা মুখের ওপর বলেন ‘মূর্খ!’ তাঁর ভদ্রতা একটি গণ্ডীর মধ্যে বাস করে, তার বাইরে প্রায় পদার্পণ করে না। ব্যক্তিবিশেষের জন্যে তিনি তাঁর ভদ্রতার বিশেষ বিশেষ মাত্রা স্থির করে রেখেছেন। ইংলন্‌ডে যারা জন্মেছে তাদের জন্যে বড়ো চামচের এক চামচ— ইংলন্‌ডে যারা পাঁচ বৎসর আছে তাদের জন্যে মাজারি চামচের এক চামচ ইংলন্‌ডে যারা সম্প্রতি এয়েছে তাদের জন্যে চায়ের চামচের এক চামচ ও ইংলন্‌ডে যারা মূলে যায় নি তাদের জন্যে ফোঁটা দুইতিন ব্যবস্থা! ইংলণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কের ন্যূনাধিক্য নিয়ে তাঁদের ভদ্রতার মাত্রার ন্যূনাধিক্য হয়। তাঁদের মাপাজোকা ভদ্রতার পায়ে গড় করি, তাঁদের ‘principle’এর পায়ে গড় করি।

 বিলেতে এলে লোকে ‘principle’ ‘principle’ করে মহা কোলাহল করতে থাকে, কিন্তু আমি ও রকম বাক্যের আড়ম্বর সইতে পারি নে। আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, ‘বাস্তবিক কি তোমরা একটা স্থির মত বেঁধেছ? আর সে মতগুলি বাঁধবার আগে কেন যে সেগুলি গ্রহণ করলে তা কি বিচার করে দেখেছ?’ তাঁরা সকলেই বলে উঠবেন ‘হাঁ’; কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি, তাঁদের মধ্যে শতকরা নিরেনব্বই জন তা করেন নি। ইংরেজরা তাঁদের যদি বলে যে কাকে তাঁদের কান উড়িয়ে নিয়ে গেছে তা হলে কানে হাত না দিয়ে তাঁরা কাকের পশ্চাতে পশ্চাতে ছোটেন। সে দিন একজন গল্প করছিলেন যে তাঁকে আর এক জন বাঙালি জিজ্ঞাসা করেছিেলেন যে, ‘মশায়ের কী কাজ করা হয়?’ এই গল্প

৬২