পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

জন্মাবার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে, ‘ইংরাজের মেয়েরা এমন সরেশ লেবুর আচার তৈরি করতে পারে যে তার ভিতরে বিচি থাকে না, কিন্তু আমাদের দেশের মেয়েরা তো তা পারে না।’ এ গল্পটা আমার নিতান্ত জনশ্রুতি মনে হয় না। কেননা, মানুষের স্বভাবই এই যে, সাধারণতঃ এক জনের ওপর চটে গেলে তার পরে তার খুঁটিনাটি ধরতে আরম্ভ করে। সে দিন এক জন বাঙালি এখানকার সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশের ভোজের প্রথা যে নিতান্ত barbarous তাই প্রমাণ করবার জন্যে বললেন যে, আমাদের দেশে খাবার সময় মাছি ভ্যান্ ভ্যান্‌ করে। আর আমাদের দেশের লোকেরা যে barbarous তাই প্রমাণ করবার জন্যে বললেন যে, সেখেনে জুতো খুলে খেতে বসলে জুতো চুরি করে নিয়ে যায়। জানি নে হয়তো তাঁর বিশ্বাস যে, মাছি যদি বিলেতে আসত তো এত সভ্য হয়ে যেত যে খাবার সময় আর ভ্যান্ ভ্যান্ করত না। আর তিনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে, এ দেশের লোকেরা জুতো খুলে খায় না। খুলে খেলে এখানে চুরি যেত কি না সে বিষয়ে বলা ভারী শক্ত; অতএব সে বিষয়ে কোনো প্রকার তুলনা উত্থাপন না করাই শ্রেয়। এই রকম ক্রমাগত প্রতি ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে এ দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের তুলনা করে করে তাঁদের চটা ভাব চটনমান যন্ত্রে blood heat ছাড়িয়ে ওঠে। এক জন ইঙ্গবঙ্গ তাঁর সমবেদক বন্ধুদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে বলছিলেন যে, যখন তিনি মনে করেন যে দেশে ফিরে গেলে তাঁকে চারি দিকে ঘিরে মেয়েগুলো প্যান্ প্যান্‌ করে কাঁদতে আরম্ভ করবে তখন আর তাঁর দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না! অর্থাৎ তিনি চান যে, তাঁকে দেখবামাত্রেই ‘dear darling’ বলে ছুটে এসে তাঁর স্ত্রী তাঁকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করে তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এইটুকু

৬৮