পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

শ্রম স্বীকার করে একজনের বাড়ি গিয়ে দেখা করে দুদণ্ড কথা কয়ে আসবে তা বড়ো হয়ে ওঠে না। তার পরে আবার অনেক পড়াশুনো করে দেখাশুনো করতে যাবার বড়ো সময় পেয়ে ওঠেন না। তা ছাড়া আমি দেখেছি, এক জন ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে ভদ্র স্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করা ও তাদের সঙ্গে নানা সামাজিক ভদ্রতার নিয়ম পালন করে চলা অনেক বাঙালির পুষিয়ে ওঠে না। অনেকের দেখেছি, এক জন ভদ্র স্ত্রীর কাছে সংকোচে মুখ ফোটে না, কিন্তু এক জন নীচশ্রেণীর মেয়ের কাছে তার অনর্গল কথা ফুটতে থাকে। কিন্তু সকলের চেয়ে প্রধান কারণ এই যে, ভদ্রলোকের স্ত্রীদের সঙ্গে তাঁরা তেমন মনের মতো স্বাধীন ব্যবহার করতে পারেন না, ও রকম নিরামিষ মেশামেশি তাঁদের বড়ো মনঃপুত নয়। দাসীদের সঙ্গে তাঁরা বেশ অসংকোচে অভদ্রতাচরণ করতে পারেন। আসল কথা কী জানো? শাদা চামড়ার গুণে তাঁরা দাসীদের যথেষ্ট নীচ শ্রেণীর লোক বলে কল্পনা করতে পারেন না; এক জন বিবি দাসী বলে মনে করতে পারেন না। একটা শাড়িপরা ঝাঁটা-হস্ত কালো-মুখ দেখলে তবে তাঁদের দাসীর ভাব ঠিক মনে আসে। আমি জানি, এক জন ইঙ্গবঙ্গ তাঁর বাড়ির দাসীদের মেজদিদি সেজদিদি বলে ডাকতেন। শুনলে কি গা জ্বলে ওঠে না? তাঁর বাড়িতে হয়তো তাঁর নিজের মেজদিদি সেজদিদি আছেন; যখন কতকগুলো নীচ শ্রেণীর দাসীকে সেই নামে ডাকছেন তখন হয়তো তাঁর বিকৃত মনে একটু লজ্জা, একটু কষ্ট, একটু সংকোচও উপস্থিত হচ্ছে না। হা দুর্ভাগ্য! ছেলেবেলা থেকে যাঁদের দেখে আসছি, যাঁদের ভালোবাসা পেয়ে আসছি, বিলেতে এমন কী জিনিস থাকতে পারে যা দেখে তাঁদের ভুলে যাব, তাঁদের ওপর থেকে ভালোবাসা চলে যাবে— সুদ্ধ তাই নয় তাঁদের ওপর ঘৃণা জন্মাবে! এই কতকগুলি;

৭৫