পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

সব বুঝতে পারছি ব্যাপারখানা কী! এই সমস্ত ল্যান‍্ড‍্লেডিবর্গের সঙ্গে প্রত্যহ আহার করা হত, আর দেশে নিরীহ বঙ্গবাসীদের নিকট ‘প্রত্যহ বিবিদের সঙ্গে খেয়েছি’ বলে জাঁক করা হত! এক জন ইঙ্গবঙ্গ একবার তাঁর কতকগুলি বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন, খাবার টেবিলে কতকগুলি ল্যান‍্ড‍্লেডি ও দাসী উপবিষ্ট ছিল, তাদের এক জনের ময়লা কাপড় দেখে নিমন্ত্রণকর্তা তাকে কাপড় বদলে আসতে অনুরোধ করেছিলেন; শুনে সে বললে, ‘যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ময়লা কাপড়েও ভালোবাসা যায়!’ যে দাসী এ রকম করে উত্তর দিতে পারে তাকে কতদুর স্পর্ধা দেওয়া হয়েছে মনে করে দেখো। এ-সকল দেখে এখানকার ইংরাজদের আমাদের বাঙালিদের উপরে অত্যন্ত অশ্রদ্ধা হয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সে দিন মিসেস উড্রো (পূজনীয় মৃত উড্রো সাহেবের বিধবা পত্নী) আমাকে বলছিলেন, ‘শোনা যায়, এখানকার বাঙালিরা অত্যন্ত ছোটোলোকদের সঙ্গে মেশে ও একত্রে খায়। একবার মনে করে দেখো দেখি, কতকগুলো বেহারা ও দরোয়ানের সঙ্গে তোমরা একাসনে বসে খাচ্ছ— সে কী বিশ্রী দেখায়!’ শুনে লজ্জায় আমার শির একেবারে নত হয়ে গেল! হে ইঙ্গবঙ্গ, যদি ইংরাজদের মুখ থেকে এ বিষয়ে উপদেশ না শুনলে তোমাদের চৈতন্য না জন্মায় তবে Thackeray এ বিষয়ে কী বলেন শোনো।—

 ‘It may safely be asserted that the persons who joke with servants or barmaids at lodgings are not men of a high intellectual or moral capacity. To chuck a still-room maid under the chin, or to send Molly the cook grinning, are not, to say the least of them, dignified act of any gentleman.’

৭৭