পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

অল্প বলে সে-সকল কথা অধিক লোকের কানে ওঠে না। কিন্তু যখন ক্রমেই ভারতবর্ষ থেকে এখেনে যুবকদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেতে লাগল, যখন ক্রমেই তাঁদের দল পুষ্ট হতে চলল, তখন তাঁদের গুণাগুণ প্রকাশ হবার সম্ভাবনা বাড়তে লাগল। এখন যেন তাঁরা মনে করেন যে, তাঁরা যে-সকল অন্যায়াচরণ করবেন তাতে যে কেবল মাত্র তাঁদের যশোহানি হবে তা নয়, তাঁরা তাঁদের স্বদেশ ও স্বজাতির ওপরে কলঙ্ক আনয়ন করবেন।

 এইবার ইঙ্গবঙ্গদের একটি অতি অসাধারণ ও বিশেষ গুণ তোমাকে বলছি। এখানে যাঁরা যাঁরা আসেন প্রায় কেউ কবুল করেন না যে তাঁরা বিবাহিত। যুবতী কুমারী -সমাজে বিবাহিতদের দাম অত্যন্ত অল্প। অবিবাহিত না হলে কোনো যুবতীর উপরে তুমি ভালোবাসা দেখাতে পারো না, সুতরাং বিলাতের অর্ধেক আমোদ ভোগ করতে পারো না। অবিবাহিত বলে পরিচয় দিলে এখানকার অবিবাহিতদের সঙ্গে মিশে অনেক যথেচ্ছাচার করা যায়, কিন্তু বিবাহিত বলে জানলে তোমার অবিবাহিত সঙ্গীরা তোমাকে ও রকম অনিয়ম করতে দেয় না। সুতরাং অবিবাহিত বলে পরিচয় দিলে অনেক লাভ আছে।

 যা হোক, এই-সকল তো ইঙ্গবঙ্গদের আচরণ। অনেক ইঙ্গবঙ্গ দেখতে পাবে তাঁরা হয়তো আমার এই বর্ণনার বহির্গত। কিন্তু সাধারণতঃ ইঙ্গবঙ্গত্বের লক্ষণগুলি আমি যত দূর জানি তা লিখেছি। আমার নিতান্ত ইচ্ছা, ভবিষ্যতে যে-সকল বাঙালিরা বিলেতে আসবেন তাঁরা যেন আমার এই পত্রটি পাঠ করেন। বাঙালিদের নামে যথেষ্ট কলঙ্ক আছে; কিন্তু তাঁরা যেন সে কলঙ্ক আর না বাড়ান, তাঁরা যেন সে কলঙ্ক এ সাত সমুদ্র -পারে আর রাষ্ট্র না করেন। জ’ন্মে অবধি শত শত নিন্দা গ্লানি অপমান নত-

৭৯