পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

ছায়া এবং নীল বাষ্প। ঘননীল সমুদ্রের প্রান্তে বালুকাতীরের রৌদ্রদুঃসহ গাঢ় পীত রেখা।

 খালের মধ্যে দিয়ে জাহাজ সমস্ত দিন অতি ধীরগতিতে চলছে। দু ধারে তরুহীন বালি। কেবল মাঝে মাঝে এক-একটি ছােটো ছােটো কোটাঘর বহুযত্নবর্ধিত গুটিকতক গাছে-পালায় বেষ্টিত হয়ে বড়াে আরামজনক দেখাচ্ছে।

 অনেক রাতে আধখানা চাঁদ উঠল। ক্ষীণ চন্দ্রালােকে দুই তীর অস্পষ্ট ধূ ধূ করছে।― রাত দুটো-তিনটের সময় জাহাজ পাের্ট্ সৈয়েদে নােঙর করলে।

 ৪ সেপ্টেম্বর। এখন আমরা ভূমধ্যসাগরে, য়ুরােপের অধিকারের মধ্যে। বাতাসও শীতল হয়ে এসেছে, সমুদ্রও গাঢ়তর নীল। আজ রাত্রে আর ডেকের উপর শােওয়া হল না।

 ৫ সেপ্টেম্বর। বিকালের দিকে ক্রীট দ্বীপের তটপর্বত দেখা দিয়েছিল। ডেকের উপর একটা স্টেজ বাঁধা হচ্ছে। জাহাজে এক দল নাট্যব্যবসায়ী যাত্রী আছে, তারা অভিনয় করবে। অন্যদিনের চেয়ে সকাল-সকাল ডিনার খেয়ে নিয়ে তামাশা আরম্ভ হল। প্রথমে জাহাজে অব্যবসায়ী যাত্রীর মধ্যে যাঁরা গানবাজনা কিঞ্চিৎ জানেন এবং জানেন না, তাঁদের কারও বা দুর্বল পিয়ানাে টিংটিং কারও বা মৃদু ক্ষীণকণ্ঠে গান হল। তার পরে যবনিকা উদ্ঘাটন করে নট-নটী-কর্তৃক ‘ব্যালে’ নাচ, সঙ নিগ্রোর গান, জাদু, প্রহসন-অভিনয় প্রভৃতি বিবিধ কৌতুক হয়েছিল। মধ্যে নাবিকাশ্রমের জন্যে দর্শকদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ হল।

 ৬ সেপ্টেম্বর। খাবার ঘরে খােলা জানলার কাছে বসে বাড়িতে চিঠি লিখছি। একবার মুখ তুলে বামে চেয়ে দেখলুম ‘আয়োনিয়ান’ দ্বীপ দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের কোলের মধ্যে সমুদ্রের ঠিক ধারেই

৮৭