পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

জানে― মাঝে মাঝে কেবল কতকগুলাে শুকনাে খড়কের মতাে আছে মাত্র।

 রাত্রে আমরা গাড়ির ভােজনশালায় ডিনারে বসেছি, এমন সময় গাড়ি একটা স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। এক দল নরনারী প্ল্যাটফর্মে ভিড় করে বিশেষ কৌতূহলের সঙ্গে আমাদের ভোজ দেখতে লাগল। তারই মধ্যে গ্যাসের আলােকে দুটি-একটি সুন্দর মেয়ের মুখ দেখা যাচ্ছিল, তাতে করে ভােজনপাত্র থেকে আমাদের চিত্তকে অনেকটা পরিমাণে বিক্ষিপ্ত করছিল। ট্রেন ছাড়বার সময় আমাদের সহযাত্রীগণ তাদের প্রতি অনেক টুপি-রুমাল-আন্দোলন, অনেক চুম্বনসংকেত-প্রেরণ, তারস্বরে অনেক উল্লাসধ্বনি-প্রয়ােগ করলে; তারাও গ্রীবা-আন্দোলনে আমাদের প্রত্যভিবাদন করতে লাগল।

 ৮ সেপ্টেম্বর। কাল আড্রিয়াটিকের সমতল শ্রীহীন তীরভূমি দিয়ে আসছিলুম, আজ শস্যশ্যামলা লম্বার্ডির মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলছে। চারি দিকে আঙুর জলপাই ভুট্টা ও তুঁতের ক্ষেত। কাল যে আঙুরের লতা দেখা গিয়েছিল সেগুলাে ছােটো ছােটো গুল্মের মতাে। আজ দেখছি ক্ষেত-ময় লম্বা লম্বা কাঠি পোঁতা, তারই উপর ফলগুচ্ছপূর্ণ দ্রাক্ষালতা লতিয়ে উঠেছে।

 ক্রমে পাহাড় দেখা দিচ্ছে। পাহাড়ের উপর থেকে নীচে পর্যন্ত দ্রাক্ষাদণ্ডে কণ্টকিত হয়ে উঠেছে, তারই মাঝখানে এক-একটি লােকালয়।

 রেলের লাইনের ধারে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের প্রান্তে একটি ক্ষুদ্র কুটির; এক হাতে তারই একটি দুয়ার ধ’রে এক হাত কোমরে দিয়ে একটি ইতালিয়ান যুবতী সকৌতুক কৃষ্ণনেত্রে আমাদের গাড়ির গতি নিরীক্ষণ করছে। অনতিদূরে একটি ছােটো বালিকা একটা

৯০